রাতারাতি বড়লোক হওয়ার মানসিকতা ছেড়ে সততার সঙ্গে ক্রেতাবান্ধব হয়ে ব্যবসা পরিচালনায় উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে সোমবার সন্ধ্যায় এমএসএমই (মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত) দিবসের আলোচনায় যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। সোমবার সন্ধ্যায় এই আয়োজনে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপতি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ, রাতারাতি বড়লোক হওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। নিজের ব্যবসাকে স্থায়িত্ব দিতে হলে সততার সঙ্গে এবং ক্রেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
‘ব্যবসা একটি মহৎ পেশা। কিছু অসাধু ব্যক্তির জন্য যাতে গোটা ব্যবসায়ী সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয় সে ব্যাপারেও ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকতে হবে এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।’
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আগামী দিনে বড় ব্যবসায়ী হবেন মন্তব্য করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘দেশের অনেক শিল্পগোষ্ঠীর যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বল্প পরিসরে। মেধা, একনিষ্ঠতা, অধ্যবসায় ও সততাকে পুঁজি করে তারা ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’
কিন্তু এর বিপরীত চিত্র আছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ ব্যবসা শুরু করেই রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান নানা অজুহাতে তারা পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। তারা ব্যবসার মুনাফাকে মানবিকতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। মানুষের অসহায়ত্বই হচ্ছে তাদের ব্যবসার মূল পুঁজি।’
এমএসএমই খাতের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সুষম উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
দেশের শিল্প খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘দুদিন আগে জাতির আত্মমর্যাদা ও গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
‘এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতিতেও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এমএসএমই একটি শ্রমঘন ও স্বল্পপুঁজিনির্ভর খাত উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ খাতের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অধিক দক্ষতা এবং অবকাঠামোর প্রয়োজন হয় না। স্বনির্ভর হওয়ার ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কেউ মাইক্রো বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে পারেন।’
দেশের তরুণরা লেখাপড়া শেষে চাকরির পেছনে ছোটায় নাখোশ রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি বলেন, ‘সবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা একেবারেই অসম্ভব। এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।
‘একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন না, অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
২০২৬ সালে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তখন অন্যান্য সেক্টরের মতো শিল্প খাতের জন্য যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে, আবার বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’