পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিনই প্রাণঘাতী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। তবে তাতে দুর্ঘটনাটি কীভাবে ঘটল সেটি স্পষ্ট নয়।
দুর্ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, সে বিষয়ে না পদ্মা সেতু উত্তর, না পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা কোনো বক্তব্য দিচ্ছে।
গত শনিবার সেতু উদ্বোধন হলেও যান চলাচল চালু হওয়ার পর থেকেই এক ধরনের উন্মাদনা দেখা দেয়। এতে যান চলাচল শুরু হয় পরদিন ভোর থেকে। আর সেতু দিয়ে পারাপারের অভিজ্ঞতা নিতে রাত থেকেই দুই তীরেই হাজার হাজার যানবাহনের সারি দেখা যায়।
সবচেয়ে বেশি পারাপার হয়েছে মোটরসাইকেল। দুই চাকার এই যানের ভিড়ের কারণে অন্য গাড়ির সেতুতে উঠতে নানা সমস্যার পর রোববার রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাইক পারাপারই নিষিদ্ধ করা হয়।
এই সিদ্ধান্ত জানানোর কিছুক্ষণ আগেই ঘটে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা, যাতে প্রাণ হারান দুই যুবক।
এই দুর্ঘটনার পর দুই থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দুইজনের মৃত্যৃর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। এখানেই মৃত্যু হয় দুইজনের।
নিহত দুইজন হলেন আলমগীর হোসেন ও মো. ফজলু। তাদের দুইজনেরই বয়স ২৫।
পরদিন এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, তীব্র গতিতে বাইকটি ছুটছিল। একপর্যায়ে বাম লেন দিয়ে একটি ট্রাককে ছাড়িয়ে যেতে চায়। মুহূর্তে বাইকটি পড়ে যায়।
এর পরের কিছু ছবি আসে ফেসবুকে। পড়ে থাকা বাইকের পাশে দুইজনের নিথর রক্তাক্ত দেহ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরে সেই শঙ্কাই সত্য প্রমাণ হয়।
তবে এই ভিডিওতে দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট নয়।
জানতে চাইলে নিহত ফজলুর মামাতো ভাই আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইকে গতি বেশি ছিল। এই গতি অবস্থায় বাঁ দিক দিয়ে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকে একটু টাচ লেগে দুর্ঘটনা ঘটে।
‘বাইক ফজলু চালাচ্ছিলেন। আলমগীর পেছনে বসে ছিলেন। ফজলুরা ছয় বন্ধু মিলে তিনটি মোটরসাইকেলে পদ্মা সেতু দেখতে গিয়েছিলেন।’
দুর্ঘটনার যে ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, সেটি লাইভের। ফজলু বাইক চালানোর সময় পেছনে বসে লাইভ করছিলেন আলমগীর।
ভিডিওতে কী দেখা যায়লাইভে কোনো কথা ছিল না। শুধু বাতাসের শব্দ ছিল। এতে স্পষ্ট যে বাইকটি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে চলছিল।সেতুর সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। তবে লাইভের শুরুতে দেখা যায় মোটরসাইকেলের গতি ৯০ কিলোমিটার। পরে একবার তা নেমে আসে ৮১ কিলোমিটারে। পরে আবার বাড়তে থাকে।
ভিডিওর ৫০ সেকেন্ডের দিকে গতিসীমা ১০০ কিলোমিটার হয়ে যায়। পরে তা উঠে যায় ১০৫ কিলোমিটারে।
সেতু চালু হওয়ার পর দিনভরই নির্ধারিত গতিসীমার বাইরে গিয়ে বাইকাররা মোটরসাইকেল চালিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বেপরোয়া বাইকাররা নিজেকে সংবরণ করতে কোনো উদ্যোগই নেননি।
দুর্ঘটনায় পড়া বাইকের চালক ফজলু দ্রুতগতিতে চালানোর পাশাপাশি প্রচুর হর্ন দিচ্ছিলেন। হর্ন শুনে অন্যান্য গাড়ির চালক তাকে যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিচ্ছিলেন।
ওভারটেক করার জন্য ডান পাশের লেন ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ফজলু কিছুই মানছিলেন না। তিনি বারবার বাঁ পাশের লেন ব্যবহার করছিলেন। আবার দুই লেনের যে অংশই ফাঁকা পাচ্ছিলেন, সেখান দিয়েই যাচ্ছিলেন তিনি।
লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, যখন মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়, তখন গতি ছিল ৭৯ কিলোমিটার। সেটি ছিল ট্রাকের বাঁ পাশে। হঠাৎ ডান দিকে ট্রাকের সামনের অংশে ধাক্কা খায়। এ সময় লাইভ অন্ধকার হয়ে যায়।
সেতুর ২৭ ও ২৮ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেতুর জাজিরা প্রান্ত ঘুরে ফেরার সময় মাওয়া প্রান্তে এসে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরে আহত অবস্থায় দুই বন্ধুকে একটি পিকআপে তুলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন।