বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে গতকাল, রোববার সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ পার হচ্ছেন, সঙ্গে উচ্ছ্বাস-আনন্দের ছড়াছড়ি। পদ্মা সেতু দেখতে ঢাকা থেকে অনেকেই যাচ্ছেন। বিকেল পর্যন্ত ঢাকা থেকে অনেকেই গিয়েছেন সেতু দেখতে। অনেকে সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফেরত আসছেন।
পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন, যোগাযোগ সুবিধার কারণে আগামী কয়েক দিন অনেক মানুষ ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে যাবেন।
গুলিস্তান থেকে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছেন জামাল উদ্দিন। কয়েকজন বন্ধু মিলে যাচ্ছেন তারা।
নিউজবাংলাকে জামাল বলেন, ‘গতকাল সেতু দেখতে যাইনি, কারণ অনেক ভিড় হবে এটা জানতাম। তাই আজকে যাচ্ছি। মাওয়া ঘাটের ইলিশ খাওয়াও হবে, সেতু দেখাও হবে।’
আরাম পরিবহনের যাত্রী মো. সুমন বলেন, ‘যাচ্ছি সেতু দেখতে। এই সেতু নিয়ে কত কিছুই না হলো, তাই সেতু দেখার লোভ সামলাতে পারছি না। সারা দিন মাওয়া ঘাটে থেকে বিকেলে ফিরব।’
পদ্মা সেতুতে বাইক রেখে ছবি তুলছেন অনেকেই। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
ঢাকা থেকে মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের টিকিট চেকার মো. মজিবর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটে সেতু দেখতে অনেকেই যাচ্ছেন। বাসে আজকে যাত্রীদের ভালোই ভিড়। তবে গতকাল থেকে আজকে লোক কম। অনেকে পরিবার নিয়ে গেছেন ব্রিজ দেখতে।’
আরাম পরিবহন গুলিস্তান থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাচ্ছে। আরাম পরিবহনের কন্ডাক্টর সুজন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে মাওয়া ঘাটে নেমে যাচ্ছেন, আবার অনেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাচ্ছেন। তবে আমরা কাউকেই সেতুতে নামতে দিচ্ছি না। সেতুর ওপরে যারা গেছেন, তারা নিজেদের গাড়িতে গেছেন।’
রাজধানীর গুলিস্তানের বিআরটিসি কাউন্টারেও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে সকাল থেকে। বেশির ভাগই নতুন সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য এসেছেন।
তাদের একজন রামিজ উদ্দিন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক কাজে দুই কাজ করতে বাড়ি যাচ্ছি। ব্রিজ দেখাও হলো, ব্রিজের ওপর দিয়ে বাড়ি যাওয়াও হলো। তবে ব্রিজে একটু নামতে পারলে আরও ভালো লাগবে, কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।’
সপরিবারে ঘোরাঘুরি
সাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর গণপরিবহন ছাড়া অন্য প্রায় সব গাড়িই পদ্মা সেতুতে থামতে দেখা গেছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি তুলেছেন ছবি।
মাইক্রোবাস ভাড়া করে পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে আসেন তোফাজ্জল হোসেন। গাড়িটি দাঁড় করিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পরিবারের ১৪ সদস্য সেতু ঘুরে দেখেন; তোলেন দলবদ্ধ ছবি।
পদ্মা সেতুর প্যাট্রল টিম সেতু থেকে সরিয়ে দিচ্ছে অনেক লোকজনকে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
নিউজবাংলাকে তোফাজ্জল বলেন, ‘যেদিন সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে, আমরা সেদিনই ঠিক করেছি প্রথম দিনই সেতু দেখতে আসব। এ জন্য আমার মা, খালা, ফুপুসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। সারা দিন ঘুরে আবার কুমিল্লা ফিরে যাব।’
সাধারণদের নিয়ম ভাঙার এ খেলা বন্ধ করতে সাইরেন বাজিয়ে সেতুর উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে টহল গাড়ি। থেমে থাকা গাড়ি বা মানুষকে দাঁড়াতে দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন প্যাট্রলম্যান। কখনও অনুরোধ করে, আবার কখনও গলা চড়িয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন নিয়মকে থোড়াই কেয়ার না করা লোকজনকে।
সেতুর প্যাট্রলম্যান সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গাড়ি নিয়ে শুধু ছুটেই যাচ্ছি। পাবলিক কোনো কথা শোনে না৷ এক জায়গার মানুষের গাড়ি সরাচ্ছি, অন্য জায়গায় আবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
‘কেউ কেউ আবার অনুরোধও শুনছেন না। তখন বাধ্য হয়ে আমি তাদের গাড়ির কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে নিচ্ছি আর বলে দিচ্ছি সেতু থেকে নেমে যাওয়ার পর আমি এগুলো ফেরত দেব। কথা না শুনলে কী আর করতে পারি বলেন? এখানে নিয়ম ভাঙলে জরিমানার বিধান রাখা হয়নি।’
নিয়ম ভাঙার প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, ‘দেখেন আমরা তো কত অনিয়মই করি। এতদিনের ইচ্ছা স্বপ্নের সেতুতে এসে দাঁড়াব। নিজের স্বপ্নপূরণে একটু অনিয়ম করা দোষের কিছু না।’