পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পার হতে গিয়ে সেতুর দুই প্রান্তে আটকে গেল দুই নৌকা।
নিয়ম না মানায় রোববার সকালে এই দুই বাহন আটকে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আবেগতাড়িত হয়ে মূলত নৌকার আদলে দুটি মোটরযানকে সাজিয়েছিলেন মিনারুল ইসলাম ও শহিদুল শেখ নামের দুই ব্যক্তি। তারা চেয়েছিলেন এই নৌকা দুটি নিয়ে পার হবেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
কিন্তু বিধি বাম। মিনারুলের নৌকা তিন চাকার ইজিবাইক ও শহিদুলের নৌকা ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর মোটরসাইকেল হওয়ায় বাহন দুটিকে সেতু পাড়ি দেয়ার অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগের দিন শুক্রবার পদ্মার মাওয়া প্রান্তে রাজধানীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মিনারুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের।
মিনারুল একটি মোটরযানকে নৌকার আদলে সাজিয়ে তা নিয়ে ছুটে যান জাজিরা প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে যোগ দিতে। মেয়েকে সঙ্গে করে তিন দিন এই নৌকাতেই ছিলেন তিনি।
মিনারুল ওইদিন জানিয়েছিলেন, তার ইচ্ছা নিজের বানানো এই নৌকা নিয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকায় ফিরতে চান তিনি। কিন্তু মিনারুলের এ ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি।
সেতু পার হতে গিয়ে আটকে গেছে শহিদুলের নৌকা। ছবি: নিউজবাংলা
রোববার সকালে মিনারুল তার নৌকা নিয়ে হাজির হন জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায়। প্রথমে সেতু কর্তৃপক্ষ তার নৌকাটিকে মাইক্রোবাস মনে করে ১৩০০ টাকা টোল নির্ধারণ করে। কিন্তু তারপর আবার যাচাই করা হলে দেখা যায়, এটি মূলত তিন চাকার ইজিবাইক। এরপরই হয় মিনারুলের স্বপ্নভঙ্গ।
মিনারুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অনেক অনুরোধ করলাম, ১৩০০ টাকা টোলও দিতে চাইলাম কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শুনল না। আমার মেয়েটারও মন খুব খারাপ হয়ে গেল। এখন আবার ফেরিতেই নদী পার হতে হবে।’
এদিকে সকালে মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় সেতু কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েন শহিদুল শেখের নৌকা নিয়ে। একটি ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর মোটরবাইককে নৌকায় রূপ দিয়েছেন কুষ্টিয়ার শহিদুল।
প্রথমে শহিদুলের কাছে টোল চাওয়া হলে তিনি জানান, তার কাছে টোলের টাকা নেই। এরপর তার মোটরসাইকেল পরীক্ষা করে দেখা হয় এটির ফিটনেসও নেই। বিষয়টি শহিদুল মানতে নারাজ। তাকে বোঝাতে গিয়ে সেতুর একটি টোলঘরের কার্যক্রম আটকে থাকে বেশ কিছুক্ষণ।
শহিদুল শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো আমাগো এত বড় অর্জনে আনন্দ করতে আইছি। আমি গরিব মানুষ, পকেটে খালি তেল নিবার ৩০০ ট্যাকা আছে, টোল দিমু কইথেইক্যা? তিন দিন ধইরা এইখানে পইড়া ছিলাম আমার নৌকাডা নিয়া বিরিজে উঠমু এই আশায়, অহন মনডা খারাপ লাগতাছে।’
এ বিষয়ে সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুতে কী ধরনের যান চলবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। আমরা তো এর ব্যত্যয় ঘটাতে পারি না। থ্রি হুইলার সেতুতে চলবে না, আর অন্য যে মোটরসাইকেল সেটির অবস্থা খুব খারাপ। তো এই অবস্থায় এগুলোকে সেতু পার হওয়ার অনুমতি কীভাবে দেয়া যায়?’