নতুন প্রজন্মকে দেশের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নিজ সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশুরাই তো প্রধানমন্ত্রী হবে, শিক্ষক হবে। সেভাবেই তারা তৈরি হোক। প্রযুক্তি-বিজ্ঞানের সঙ্গে তালমিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সব সময় গবেষণার ওপর জোর দিয়েছি। কারণ গবেষণাই পারে পথ দেখাতে।
‘তোমাদের এই সুপ্ত মেধাই তো আমাদের ভবিষ্যৎ। এই মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক সুপ্ত জ্ঞান বের হয়ে আসতে পারে। নতুন প্রজন্মকে বলব, সোনার ছেলেমেয়েরা তৈরি হও, দেশকে নেতৃত্ব দিতে। বাংলাদেশ যেন আর পিছিয়ে না থাকে, বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়। উদ্ভাবনী শক্তিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও উন্নত হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদেরও সমান সুযোগ দেয়ার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মাঝেও সুপ্ত বুদ্ধি থাকে। তাদেরও একসঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। তারা আমাদেরই আপনজন এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরাও এই সমাজেরই একটি অংশ।
‘নতুন প্রজন্মকে বলব সবাইকে নিয়ে চলো, তবেই না আমরা সাফল্য পাব’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সকলকে নিয়ে চলো, তাহলেই সাফল্য আসবে
সাফল্যের জন্য সমাজের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে নতুন প্রজন্মকে উপদেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেভাবেই নিজেদের তৈরি করার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তাদের মধ্যে অনেক সুপ্ত জ্ঞান থাকে। কোনো একটি বিষয়ে তারা অনেক বেশি আগ্রহী থাকে এবং তাদের সেই প্রতিভা কাজে লাগানো যায়। তাদেরও একই সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
‘তারা আমাদেরই সম্পদ, আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই আপনজন। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। তারা এ সমাজেরই একটা অংশ। তাদের পাশে থেকে সহযোগিতাও করতে হবে। আমি নতুন প্রজন্মকে বলবো, সকলকে নিয়ে চলো তাহলেই না সাফল্য অর্জন করতে পারবো। তোমরা সেভাবেই নিজেদের তৈরি করবে।’
এ সময় শিক্ষার বিকাশে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। সমালোচনা করেন সামরিক শাসকদের।
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে বিজ্ঞানী কুদরত এ খোদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। সেই কমিশন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন এবং সেটা জাতির পিতার হাতেও দিয়েছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সেই কমিশনের রিপোর্ট আর কখনও আলোর মুখ দেখেনি।
‘কারন তখন মার্শাল ল জারি করা হয়, মার্শাল ল দিয়ে দেশ পরিচালনা করা হয়। এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়। তারা শিক্ষার পরিবেশটা নষ্ট করে। ডিক্টেটররা মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র-অর্থ তুলে দিয়ে, মাদক তুলে দিয়ে একটি লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করে যাদের মাধ্যমে তারা ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার চেষ্টা করে। কাজেই শিক্ষার পরিবেশটাই তারা নষ্ট করে দেয়। সেশন জটের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশটা অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়ে।’
৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে। এরপর আমাদের প্রচেষ্টা ছিল সমস্ত ক্যাম্পাসগুলোতে একটি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে আসা বা শিক্ষাকে আধুনিক করা, আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষাসহ আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। পাশাপাশি গবেষণার উপর আমি গুরুত্ব দেই। আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে গবেষণার জন্য কোনো আলাদা বাজেট দেয়া হতো না, উৎসাহ দেয়া হতো না। শুধু নিয়মমাফিক যেটুকু গবেষণা সেটুকুই হতো।
সরকার প্রধান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রথম পর্যায়েই আমি ১২ কোটি টাকা তখন দিয়েছিলাম। বিশেষ করে খাদ্যে কিন্তু তখন পরনির্ভরশীল ছিলাম সেখানে আমি কৃষি গবেষণাকে গুরুত্ব দেই। পরের বছর আমরা যে বাজেট দেই সেখানে ১শ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দ রেখেছিলাম একটি হলো কম্পিউটার বা প্রযুক্তি শিক্ষা আরেকটি হলো গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
‘জ্ঞান শিক্ষায় তখন অনেক পিছিয়ে ছিল আমাদের ছেলেমেয়েরা। আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের পদক্ষেপ নিই এবং আইন পাস করে ৬টি নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলাম। সমুদ্র বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউট আমরা তৈরি করি। সে সময় সারা দেশে মাত্র একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আমরা আরও কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করি। দেশে তখন কোনো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, আমরা প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করি।’
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জোর
করোনার উর্ধ্বগতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি সবাইকে করোনা প্রতিরোধী টিকা নিতেও আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে দুটো বছর সময় নষ্ট হয়েছে। তবে এখন আমরা টিকা দিয়েছি, বুস্টার ডোজও আমরা দিচ্ছি কাজেই আমি আশা করি এই টিকা আমরা দেব। যদিও ১২ বছরের উপরের যারা তাদেরই শুধু আমরা টিকা দিতে পারছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আমাদের আবেদন আছে যে আরও অল্প বয়সে টিকা দেয়া সম্ভব কিনা সে চেষ্টাও আমরা রাখছি।
‘মানুষের জীবনটাতো আগে বাঁচাতে হবে এজন্য দু বছর পারিনি। তবে এখন করোনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তবে ইদানিং আবার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কাজেই সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলতে হবে।’
চাকরিজীবীদের সেবার মানসিকতা ধরে রাখার তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেবার মানসিকতা সকলের মধ্যে থাকতে হবে। আজকে এই চাকরিজীবীরা যে যেখানেই আছেন মনে রাখবেন, আমাদের এই সম্পদ তো জনগণেরই সম্পদ। তারা রোদ বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই তো এটা অর্জন করেন।
‘কাজেই তাদের সমান অধিকার থাকবে’, যোগ করেন তিনি।
কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে পদ্মা সেতু প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে যখন দুর্নীতির অভিযোগ দিল। আমার পরিবার থেকে শুরু করে সকলের উপর এত বড় একটা অভিযোগ কখনই গ্রহণ করতে পারিনি। কারণ এখানে আমি এসেছি দেশের জন্য কাজ করতে, মানুষের জন্য কাজ করতে। নিজের ভাগ্য গড়তে না। কাজেই এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দিয়েছিলাম যে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।
‘দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশের কোনো কোনো ব্যক্তির প্ররোচনায় এ ঘটনাটা ঘটে। এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। যখন আমাদের অর্থ বন্ধ করে দেয়া হলো আমি সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রকৌশলীরা সাহস করে এগিয়ে এসেছিলেন। আন্তর্জাতিকভাবেও যারা সহযোগিতা করেছে তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা তো করে দেখিয়েছি যে হ্যাঁ বাংলাদেশ পারে, আমরাও পারি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন দাবায়ে রাখতে পারবা না, কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি।’