বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এক দিনমজুরের বাড়িতে বেড়ে উঠেছে হানি সিং। ভারতীয় সংগীত তারকার নামে হলেও এটি আসলে একটি ষাঁড়! কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে সাড়ে ২৭ মণ ওজনের এই ষাঁড়টিকে।
১০ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট উচ্চতার বিশালাকৃতির এই গরুটির দাম ১০ লাখ টাকা হাঁকাচ্ছেন আগৈলঝাড়ার বারপাইকা গ্রামের রমনী পাণ্ডের ছেলে কাঠমিস্ত্রি অরুণ পাণ্ডে।
প্রায় ৩ বছর আগে চিটাগাং সিন্ধি দেশি জাতের গাভী থেকে প্রজননের মাধ্যমে হলেস্টান ফ্রিজিয়ান জাতের হানি সিংয়ের জন্ম হয়।
হানি সিং ছাড়াও অরুণের খামারে রয়েছে টাইগার নামের আরও একটি ষাঁড়। লম্বায় ৭ ফুট টাইগারের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাওয়ানো হয় গরু দুটিকে।
হানি সিং আর টাইগারের পরিচর্যা, দেখাশোনা, খাবার দেয়া, গোসল করানো, খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সব কাজ একাই করেন দিনমজুর অরুণ পাণ্ডে।
তিনি জানান, কোনো ধরনের মোটাতাজাকরণের কৃত্রিম উপায় ছাড়াই কোরবানির জন্য গরু দুটিকে প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের প্রতিদিন আড়াই কেজি গুড়, ৫ কেজি ভুসি, ২ কেজি ডালের ভুসি, ২ কেজি ধানের কুঁড়া, ১ কেজি ভুট্টার গুঁড়া, ২ কেজি গমের ভুসি, ৫ কেজি তিলের খৈল, ১০ কেজি চালের গুঁড়া, ঘাস এবং ২ কেজি খুদের ভাত খাওয়ানো হচ্ছে।
প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা দেখতে আসছেন বিশালাকৃতির এই গরু দুটিকে।
অরুণ বলেন, ‘হানি সিং নাম রেখেছি শখ করে। ১০ লাখে বিক্রি করব তাকে।’
স্থানীয় মমিনুল জানান, কাঠমিস্ত্রি হিসেবে দিন মজুরি করে যা আয় হয়, তার প্রায় পুরোটাই গরু দুটির পেছনে ব্যয় করেন অরুণ। নায্য দাম না পেলে অনেক লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাকে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে হানি সিং ষাঁড়টিকে লালনপালন করা হয়েছে। হানি সিং ছাড়াও উপজেলার সব খামারির গরু নিয়মিত মনিটরিংসহ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে আসন্ন কোরবানিতে বাজার কাঁপাতে আসছে ‘বস’ নামে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আরেকটি ষাঁড়। স্থানীয়ভাবে ইতোমধ্যেই গরুটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি শফিকুল ইসলাম নিজের শ্রম আর অর্থ দিয়ে তিন বছর ধরে লালনপালন করেছেন এই ষাঁড়টিকে। ন্যায্যমূল্যে গরুটিকে বিক্রি করে লাভবান হওয়াই তার প্রত্যাশা।
বড়াইগ্রামের প্রত্যন্ত ভাণ্ডারদহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মুদি দোকানি শফিকুল ইসলামের বাড়িতে বেশ আদর-যত্নেই আছে ফ্রিজিয়ান জাতের ৩৬ মণ ওজনের ‘বস’। গরুটিকে ঘিরে জটলা পাকিয়ে আছেন গ্রামের নানা বয়সী মানুষ।
শফিকুল জানান, তিন বছর আগে পাশের গ্রাম থেকে গরুটি কিনেছিলেন তিনি। তারপর থেকেই অত্যন্ত যত্ন নিয়ে তিনি ও তার স্ত্রী গরুটি লালনপালন করেছেন। আদর করে নাম রেখেছেন বস।
মুদি দোকান থেকে যা আয়, তার একটি বড় অংশই খরচ হয় এই বসের পেছনে। গরুটির খাদ্য তালিকায় রয়েছে- ধান, গম, ভুট্টা, খেসারি ও ছোলার মিশ্রণ। বসকে বড় করে তুলতে প্রতিদিন সাত থেকে আট শ টাকা খরচ হলেও গত দুই মাস ধরে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে।
শফিকুল আরও জানান, বসকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে তিনি লালনপালন করেছেন। বস কখনো বাসি-পচা খাবার খায় না।
স্বভাবে শান্ত হলেও কেউ বিরক্ত করলেই রেগে যায় বস। এটাই জেলার সবচেয়ে বড় গরু বলে দাবি করেন শফিকুল।
আসন্ন কোরবানিতে কোনো বিত্তবান ন্যায্যমূল্যে গরুটি কিনে নেবেন- এমনটাই চান শফিকুল। অন্তত ১০ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করলে লাভবান হবেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, চলতি বছর নাটোরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যার একটি অংশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাবে।
এ ছাড়া ৩০ থেকে ৩৬ মণ ওজনের বড় গরুগুলো বিক্রির জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এবার গরু বিক্রি করে খামারিরা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন গোলাম মোস্তফা।