‘মানুষের শক্তি বড় শক্তি, সেই শক্তি নিয়েই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা। পদ্মা সেতু সফলভাবে নির্মাণের জন্য জনগণকে স্যালুট জানাই।’
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে শনিবার আনুষ্ঠানিক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে সুধী সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তৈরি হওয়া নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। পাশাপাশি সে সময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই শক্তি পাওয়ার কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আজকে বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। আমিও আনন্দিত ও গর্বিত, উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা আজ এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি।
‘পদ্মা সেতু শুধুই একটি সেতু নয়। এই সেতু দুপারে যে বন্ধন তৈরি করেছে তা-ও নয়, এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্টের তৈরি একটি অবকাঠামো নয়; এই সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব।’
‘এই সেতু আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার শক্তি। এই সেতু জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা ও সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের কারণে এই সেতু নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়। কিন্তু আমরা কখনও হতোদ্যম হইনি, হতাশ হইনি। এবং শেষ পর্যন্ত সব অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে পদ্মার বুকে লাল-নীল আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ, এই স্তম্ভ যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু এটুকুই বলব- যখন সব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়াল, তখন পার্লামেন্টে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করব, নিজস্ব অর্থায়নে করব। এ ঘোষণার পর আমার দেশবাসী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম। মানুষের শক্তি বড় শক্তি, সেই শক্তি নিয়েই এই সেতুর নির্মাণকাজ আমি শুরু করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকের মন্তব্য ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে আবার কীভাবে করব? ধারণা ছিল এই বাংলাদেশ সারা জীবন পরনির্ভরশীল থাকবে, আর অন্যের দয়ার ওপরই চলতে হবে। জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে।
‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। সেদিন তারা শুধু আমার পাশে দাঁড়াননি, অনেকে অর্থ পর্যন্ত দিয়েছিলেন। যে যতটুকু পেরেছিলেন। আমি বলেছিলাম- আমরা বাজেট থেকে করতে পারব, ওটাও তো জনগণেরই টাকা। আল্লাহর রহমতে আমরা সেটাই করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা তখন বলেছিলেন- এটা হবে না, নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভব না, এটা একটা স্বপ্নমাত্র, এটার বাস্তবায়ন সম্ভব নয় ইত্যাদি…। যাহোক আমার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ বা অনুযোগ নেই।
‘তাদের চিন্তার দৈন্য আছে, আত্মবিশ্বাসের দৈন্য আছে। আমি মনে করি এতে তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বাংলাদেশের জনগণই হচ্ছে আমার সাহসের ঠিকানা, তাই জনগণকে আমি স্যালুট জানাই। আশা করি, এ সেতুর কাজ বন্ধ করতে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে, দেশের মানুষের প্রতি তারা দায়িত্ববান হবে।’