বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিরিজে না উঠলে কইলজা ফাইট্যা মইরাই যাইতাম’

  •    
  • ২৫ জুন, ২০২২ ১৬:১০

‘আমরা যহন দেখলাম একটা দুইডা গাড়ি যাইতাছে, তখনই ঠিক করলাম যেমনেই হোক বিরিজে উঠমু। আমরা তারের বেড়ার উপর দিয়া বিরিজে উঠলাম। বহুত মজা করছি, ভাবছিলাম ওই পাড় যামুগা। কিন্তু অর্ধেক বিরিজে যাওয়ার পর র‌্যাব পুলিশ আইসা লাঠি দিয়া মাইর শুরু করল। এমন মাইর দিছে শরীর ফুলাইয়া ফেলছে। মাইর খাইলে খাইছি কোনো সমস্যা নাই, বিরিজে তো উঠছি। আইজকা বিরিজে না উঠলে কইলজা ফাইট্যা মইরাই যাইতাম।’

নিয়ম ভেঙে উৎসাহী জনতা পদ্মা সেতুতে উঠে অবশেষে নামল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিটুনি খেয়ে। তবে পিটুনি খেয়েও আক্ষেপ নেই বলে জানান একজন। বলেছেন, তিনি সেতুতে উঠতে না পারলে দম ফেটে মরে যেতেন।

অনুমতি না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী সেতু উদ্বোধন করার পর বেলা ১টার দিকে মাওয়া প্রান্তে অসংখ্য মানুষ ঢুকে পড়ে সেতুতে। পরে প্রায় এক ঘণ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উৎসুক সাধারণদের সেতু থেকে নামানোর জন্য লাঠিপেটাও করেন তারা।

প্রধানমন্ত্রী সেতু পার হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বহনকারী কিছু বাসও পার হয়। বেলা ১টার দিকে সেতুর উল্টো পথের মুখ থেকে পুলিশ পাহারা কিছুক্ষণের জন্য শিথিল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও কয়েকটি মাইক্রোবাস সেতুতে উঠে পড়ে।

এর সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা বেষ্টনী টপকে, কোথাও ভেঙে, আবার কোথাও বেষ্টনীর নিচের মাটি সরিয়ে উৎসুক সাধারণ মানুষ সেতুতে ঢুকে পড়েন। মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরা প্রান্তের দিকে ছুটতে থাকেন তারা। একই সময়ে সেতুতে উঠে সেলফি তোলা, ভিডিও ধারণ থেকে শুরু করে মাওয়া প্রান্তের ইলিশ ফোয়ারায় নেমে হাত-মুখ ধোয়া শুরু করেন তারা।

তাৎক্ষণিকভাবে অনেকে ভেবেছিলেন, সেতু বুঝি খুলে দিয়েছে সরকার। এমন বিভ্রান্তিতে পড়ে খাবার ও খেলনা বিক্রি করতেও সেতুতে উঠে পড়েন হকাররা।

তবে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে একযোগে কাজ শুরু করে র‌্যাব, পুলিশ, ও সেনাবাহিনী। তারা সেতু থেকে বাহন ও মানুষ নামাতে লাঠিচার্জও করে। বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসে উৎসুক জনতা ও বাহনগুলো।

অতি উৎসাহী হয়ে পদ্মা সেতুতে চড়ে মার খেয়ে ফিরেছেন মিন্টু ও তার বন্ধুরা।

নিউজবাংলাকে মিন্টু বলেন, ‘আমরা যহন দেখলাম একটা দুইডা গাড়ি যাইতাছে, তখনই ঠিক করলাম যেমনেই হোক বিরিজে উঠমু। আমরা তারের বেড়ার উপর দিয়া বিরিজে উঠলাম। বহুত মজা করছি, ভাবছিলাম ওই পাড় যামুগা। কিন্তু অর্ধেক বিরিজে যাওয়ার পর র‌্যাব পুলিশ আইসা লাঠি দিয়া মাইর শুরু করল। এমন মাইর দিছে শরীর ফুলাইয়া ফেলছে।

‘মাইর খাইলে খাইছি কোনো সমস্যা নাই, বিরিজে তো উঠছি। আইজকা বিরিজে না উঠলে কইলজা ফাইট্যা মইরাই যাইতাম।’

উজ্জ্বল নামের আরেক মধ্যবয়সীকে দেখা গেল গায়ের জামা ফেলে দিয়ে বেষ্টনির নিচ দিয়ে সেতু এলাকা থেকে বরিয়ে আসছেন। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘খালি শেখের বেটি বিরিজে উঠব আমরা উঠব না? সবার দেখাদেখি শখ কইরা গেলাম বিরিজে, পুলিশ পিটাইয়া লাল কইরা দিল। কামডা ঠিক করল না।’

জামাল নামের এক যুবক ঘটনার শুরুর দিকেই সেতুর বেষ্টনী টপকে ওপরে উঠে পড়েন। তিনি বলেন, “আমি ব্রিজে উঠে দেখি মাওয়ার দিক উল্টা রাস্তায় থেকে একটা মোটরসাইকেল আসতেছে। ওই লোক একা ছিল। আমি তারে সিগন্যাল দিয়ে থামায়া বললাম, ‘ভাই ব্রিজ পার হইতেছেন, আমারেও নিয়া যান’।

‘আমাদের আগে প্রথম একটা মোটরসাইকেল গেছে, পরেরটাতেই আমি ছিলাম। আমরা দুইজন কথা বলতে বলতে ব্রিজ থেকে নামব, তার আগেই আমাগো র‌্যাব-পুলিশ আটকায়া জিগাইল, কই যাই। ড্রাইভার ভাই কইল, ঘুরতে আইছি।’

‘অমনি লাঠি দিয়ে বাড়ি দিল আর আমরা মোটরসাইকেল ঘুরায়া আবার আইসা পরলাম। আমি মোটরসাইকেলওয়ালা ভাইরে জিগাইছিলাম ব্রিজ খুইলা দিছে নাকি। উনি কয় জানি না, ফাঁকা পাইয়া আইসা পরছি।’

পদ্মা সেতুর উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে সেতুর সীমানা প্রাচীর টপকে মানুষ ঢুকে পড়ে। আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ক্রাউড কন্ট্রোল করি।’

সেতুতে উল্টোপথে মোটর সাইকেল ও গাড়ি কীভাবে উঠল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেতুতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল উঠেছে কি না এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

র‌্যাব ১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মোহম্মদ পাশা এ বিষয়ে বলেন, ‘সেতুতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল কীভাবে উঠল, সে বিষয়ে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। আমাদের সেতুর মব কন্ট্রোল করতে বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে দুই প্রান্ত থেকে আমরা অ্যাপ্রোচ নিয়ে মব কন্ট্রোল করি। গাড়ি মোটরসাইকেল বা মানুষ কোনোটিকেই আমরা সেতু অতিক্রম করতে দেইনি।’

এ বিভাগের আরো খবর