‘৯ দিন ধইরা গরে পানি। নয় দিনের মইধ্যে এক দিন ওই দূরের একটা বাড়ি থাইকা দুইলা রান্না কইরা আইন্না খাইছি। বাকি দিনগুলা চিড়া-মুড়ি খাইয়া কাটাইতেছি। কেউ আমরার খবর নেয় না। ৯ দিনের মাঝে এক দিনও একটা সরকারি লোক আমরার ইদারেই আইছে না! পুলাপাইন লইয়া কুব কষ্টে আছি ভাই।’
তবে শুক্রবার একটি বেসরকারি সংগঠন থেকে কিছু খাবার তারা পান বলে জানান।
নিউজবাংলার কাছে এভাবেই বন্যার দুর্ভোগ বর্ণনা করেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর (মাইজপাড়া) গ্রামের সাবাজ মিয়া। ৬ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘরের ভেতরে মাচা বানিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ঘরে হাঁটুর ওপরে পানি।
কামালপুর গ্রামের প্রতিটি পরিবারের এমন অবস্থা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ৭৭টি ইউনিয়নের মধ্যে আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর ও মাধবপুর উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আজমিরীগঞ্জ, মাধবপুর ও হবিগঞ্জ পৌরসভা।
সরকারি হিসাবে এ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ হাজার ৩২০ জন। ২৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছে ২৩ হাজার ৪৩৫ পরিবার। দুর্গতদের জন্য ৭০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৫ টনের বেশি চাল বিতরণ করা হয়ে গেছে। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য মাঠে কাজ করছে ৩০টি মেডিক্যাল টিম।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি হিসাবে জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ হাজার ৩২০ জন বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। জেলায় পাঁচ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫ লাখ মানুষ।
আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু উপজেলা শহর বা আশপাশ এলাকার বন্যায় আক্রান্ত পরিবারগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। প্রত্যন্ত হাওর এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বসবাস করছে পানির মধ্যে।
আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠা ও শহরের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় পানিবন্দি মানুষ কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলি এলাকার সৌরভ দাস বলেন, ‘আমারা ৭/৮ দিন ধরে পানিতে। চুলা তলিয়ে যাওয়ায় রান্না বন্ধ। এখন পর্যন্ত কেউ এসে এটুকুও জিজ্ঞেস করেনি যে আমরা কেমন আছি।’
আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও এলাকার স্বপন মিয়া বলেন, ‘আট দিনের মাঝে একদিন দুইলা চিড়া-মুড়ি আর একদিন ভুনা খিচুড়ি দিছে কিছু লোকে। আর কোনো সহায়তা কেউ দেয়নি।’
জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত জাহান বলেন, ‘দুর্গত এলাকার অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চায়নি। তবে সব জায়গাতেই খুঁজে খুঁজে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে।’