মাথার উপর মা-বাবার দোয়া ও আশীর্বাদের হাত ছিল বলেই পদ্মা সেতুর মতো অবকাঠামো নির্মাণ করতে পেরেছেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে শনিবার পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে সুধী সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় আবেগ আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমাকে বারবার সাহস দিয়েছেন। আমি বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে এদেশের মানুষের উপর ভরসা রেখেই ৭৫ এর পর যখন ৬ বছর রিভিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে তখন আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল বলেই আমি দেশে ফিরে আসতে পেরেছিলাম।
‘একটি লক্ষ্য সামনে রেখেই, যে বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করেছেন সে বাংলাদেশ এভাবে অবহেলিত থাকতে পারে না। যে সাহস আমি পেয়েছি, এদেশের জনগণ আমাকে সব সময় সাহস দিয়েছে। আর আমি সব সময় অনুভব করি আমার মা, আমার বাবা সব সময় তাদের দোয়া আমার উপর রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের আশীর্বাদের হাত আমার মাথার উপর আছে। তা না হলে আমার মতো অতি সাধারণ একজন মানুষ এতো কাজ করতে পারতাম না, যদি না আমার বাবা-মায়ের দোয়া-আশীর্বাদের হাত আমার মাথার উপর না থাকতো।’
‘আপনারা জানেন এই সেতু আমরা যখন নির্মাণ করতে যাই, অনেক ষড়যন্ত্র হয়। মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। দূর্নীতির অপবাদ দিয়ে কিভাবে একেকটি মানুষ একেকটি পরিবারকে কিভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। এই যন্ত্রণা ভোগ করেছিল আমার ছোট বোন শেখ রেহানা, আমার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকী, আমার উপদেষ্টা অর্থ বিষয়ক পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে যাকে আমরা উপদেষ্টা হিসেবে বিশেষ ভাবে দায়িত্ব দিয়েছিলাম মশিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ যারা এর সাথে জড়িত ছিল তাদের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। তারা পরিবারসহ যে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন তাদের আমি সমবেদনা জানাই।’
এ সময় পদ্মার দু’পারের সাধারণ মানুষ যারা পদ্মাসেতুর নির্মাণের কারণে ভিটেমাটি হারা হয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে যারা জড়িত ছিলেন, যে বিশেষজ্ঞ কমিটি আমরা করেছিলাম। প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী সাহেবসহ যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। পরিবারকে সমবেদনা জানাই।
‘আমি ধন্যবাদ জানাই, পদ্মাসেতুর দু’পারের মানুষকে, যারা এখানে বসবাস করতো। তারা নির্দ্ধিধায় তাদের জমি হস্তান্তর করে। তাদের পরিবারকে আমরা পুনর্বাসন করেছি। কিন্তু তারা নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ তাদের ত্যাগ ছাড়া এই সেতু নির্মাণ করা কঠিন হতো।’দেশের অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলোও সময় মতো শেষ হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এ বছরের শেষ নাগাদ কর্ণফুলি নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল সেটিরও নির্মাণ শেষ হবে, মেট্রোরেলের একটি অংশের কাজ শেষ হবে, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও শেষ হবে, তাছাড়া পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে সেখানে আরও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে, সার্বিক দিক থেকে আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।’