বাংলাদেশের অহংকার আর আত্মমর্যাদার প্রতীক বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতু পাড়ি দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যার অনমনীয় দৃঢ়তায় তৈরি হয়েছে এই সেতু, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু হয়েছে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের, যিনি দেখিয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগীকে চোখ রাঙানোর সাহস, সেই শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধনের পর গাড়িবহর নিয়ে তা পাড় হলেন।
সময় তখন ১২টা বেজে ১০ মিনিট। সেতুর ভায়াডাক্ট অংশ পেরিয়ে মূল সেতুতে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি। পদ্মার বুকে অহংকারের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটির ওপর তলায় বীরদর্পে এগিয়ে যায় তার গাড়ি।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছে, সেতুতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। সেই হিসাবে ৯ মিনিটের একটু বেশি সময়ের মধ্যে সেতু অতিক্রম করে ফেলার কথা প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বহরটি এগোতে থাকে ধীরগতিতে।
দূর থেকে দেখা যায়, সেতুর ১৫ নম্বর পিলারের ওপর থামে বহরটি। তারপর বর্ণিল ধোঁয়া ছেড়ে সেতুর দিকে ছুটে যায় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান মিগ-২৯-সহ আরও কয়েকটি বিমান। বিমানগুলোর স্মোকে পদ্মার আকাশ বর্ণিল হয়ে ওঠে।
জাতীয় পতাকা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত হেলিকপ্টার এগিয়ে আসে সেতুর দিকে। প্রধানমন্ত্রী সেতুর ওপর যেখানে দাঁড়িয়েছেন সেখানে গিয়ে স্থির হয় হেলিকপ্টারগুলো। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হলে তিনি তা গ্রহণ করেন।
মিনিট ১৫-এর বেশি সময় গাড়িবহর সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়। তারপর আবার ছুটে যায় জাজিরাপ্রান্তের দিকে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সেতুতে পায়চারি করেন। ছবি তুলতেও দেখা যায় তাকে।
প্রধানমন্ত্রীর সেতু পারাপার ঘিরে প্রতিটি বাড়ির ছাদে ভিড় জমান বাসিন্দারা। প্রধানমন্ত্রী সেতু পাড়ি দেয়ার সময় উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তারা। চিৎকার করে উল্লাস করেন মাওয়া প্রান্তের স্থানীয়রা। অনেকে হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। জয় বাংলা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে মাওয়া প্রান্ত।
সেতুতে ওঠার আগেই নিজ হাতে নিজের গাড়ির টোল পরিশোধ করেছেন পদ্মা সেতুর। তার আগে নামফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। ফলক উন্মোচন শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত অতিথিরা।
শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মা সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।