পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেও শেষ পর্যন্ত যাননি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূস।
সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে গত বুধবার ইউনূসের কাছে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেয়া হয়।
ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদ এ তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন। তিনি সে সময়ে বলেন, ‘আমরা আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছি। অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়ে তিনি (ড. ইউনূস) তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন। এরপর হয়তো সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।’
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশে আছেন বলেও নিশ্চিত করেন লামিয়া মোর্শেদ।
তবে শনিবার সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে দেখা যায়নি।
পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনায় ড. ইউনূসসহ বেশ কয়েকজন ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েক দিন বিভিন্ন বক্তব্যেও ইউনূসের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সুধী সমাবেশেও প্রসঙ্গটি তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
ড. ইউনূসকে নিয়ে কী অভিযোগ
পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার শুরু থেকেই তুমুল আলোচনা হচ্ছে। প্রথমে সেতুর অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ যোগাযোগ করে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। পাশাপাশি আইডিবি, এডিবি ও জাইকারও কিছু সহযোগিতা থাকার কথা ছিল।
তবে সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক নানা বক্তব্য দেয়ার পর ২০১৩ সালে এই সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।
শুরু থেকেই সরকার এই অভিযোগকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আসছিল। দাতারা সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর অভিযোগ করা হয়, সংস্থাটির এই সিদ্ধান্তের পেছনে ড. ইউনূসের হাত আছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পদ ছাড়তে বলা হয় তার বয়স ৬০ অতিক্রম করায়। তবে তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালান। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ফোন করে ইউনূসের পক্ষে সুপারিশ করেন বলে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সরকারের অভিযোগ, সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে তদবির করিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করানো হয়।
গত ১৮ মে আওয়ামী লীগের এক আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তর বক্তব্য দেন সরকারপ্রধান।
সেদিন তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।
‘ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারবে না ১০ বছর। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। বয়সটা কমাবে কীভাবে। মামলায় সে হেরে যায়।’
সেদিন ড. ইউনূসকে পদ্মা নদীতে নিয়ে চুবানি দেয়ার কথাও বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবানি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’