পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘিরে আশপাশের এলাকায় সবুজায়নও এগিয়েছে সমান তালে। নদীর দুই পাড় ও এক্সপ্রেস ওয়ের দুই পাশে রোপণ করা হয়েছে লাখো গাছের চারা। কয়েক বছরে এসব চারা বড় হয়ে সবুজের আবহ তৈরি করেছে পুরো এলাকায়।
পদ্মা পারের জনপদ ছিল অনেকটা রুক্ষ। সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে নানা প্রকারের বনজ, ফলদ, ঔষধি আর সৌন্দর্যবর্ধক বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ।
শরীয়তপুরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংযোগ সড়কের পাচ্চর থেকে টোলপ্লাজা পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫০টি বনজ ও সৌন্দর্যবর্ধক ফুলের গাছ। এই জেলার দুটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রোপণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৪০টি ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ। এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়া, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, শেখ রাসেল সেনানিবাসসহ প্রকল্প এলাকায় রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আরও ৫২ হাজার গাছের চারা।
পদ্মা সেতু প্রকল্প ও এক্সপ্রেস এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বনায়ন প্রকল্পের আওতায় আম, জাম, কাঁঠাল, তেঁতুল, নারকেল, পেয়ারা, লিচু, সেগুন, জারুল, শিলকড়ই, রাজকড়ই, গামার, তেজপাতা, দারুচিনি, নিম, বহেড়া, অর্জুন, হরীতকী, বকুল, পলাশ, দেবদারু, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলসহ ৬১ ধরনের ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ রয়েছে।
ইতোমধ্যে সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন (আরএস) এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে কৃষ্ণচূড়া, বকুল, কাঞ্চন, সোনালু, মহুয়া, বহেড়া, অর্জুন, পলাশ, শিমুলসহ অন্তত দেড় লাখ ফলদ ও ঔষধি গাছ।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের মহাসড়কের দুই পাশজুড়েও দৃষ্টিনন্দন ফুল-ফলগাছ চোখে প্রশান্তি এনে দেয়।
মাদারীপুর ও শরীয়তপুর বন বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাচ্চর গোলচত্বর পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেস হাইওয়ের মাঝখানের অংশে নানা ধরনের গাছ রোপণ করা হয়েছে।
‘এর মধ্যে রয়েছে পাতাবাহার, মসুন্ডা, সোনালু, বোতল ব্রাশ, এরিকা পাম্প, উইপিং দেবদারু, রঙ্গনসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি ফুলের ছয় হাজারসহ ৫৬ প্রজাতির প্রায় দেড় লাখ গাছ। বন বিভাগের কর্মীদের পরিচর্যা আর প্রকৃতির মহিমায় সড়কের ঢালে ফলদ ও বনজ গাছের চারাও বেড়ে উঠছে।’
মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ পরিবেশবিদ ড. বশীর আহম্মেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাছ যেমন একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে মানুষের মনের খোরাকও মেটায়। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে গেলে মনটা ভরে যায়। চোখ ধাঁধানো ফুলের সমারোহ। তবে রাস্তার ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। ছোট ছোট গাছ, ফুল ও হালকা ফলের গাছ থাকলে তেমন ক্ষতি হবে না, বরং এতে মন জুড়িয়ে যাবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অফ নেচার’-এর নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের আইল্যান্ডে যে গাছ লাগানো হয়েছে, তা সত্যি অসাধারণ। মহাসড়কের এই ১০ কিলোমিটার পথে চলার সময় মনে হয় না বাংলাদেশে আছি। মহাসড়কের মাঝে আইল্যান্ডে ফুলের গাছ, দুই পাশে ফলের গাছ। এমন সৌন্দর্যময় প্রকৃতি দেশে আর কোথাও আমার চোখে পড়েনি। তবে পরিচর্যার অভাবে অনেক স্থানে গাছ মরে গেছে। সেগুলোও কর্তৃপক্ষের নজরে রাখতে হবে।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর দক্ষিণ শিবচর প্রান্তে বন বিভাগের মাধ্যমে গত দুই বছরে সবুজায়নের প্রকল্প হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা লাগানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে। ভ্রমণপিয়াসু দর্শনার্থীর ভিড় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
সড়ক ও জনপদ বিভাগের মাদারীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের মাঝে ছোট গাছ লাগালে তেমন ক্ষতি হয় না। ফুল ও ছোট ফল গাছের শাখা-প্রশাখা তেমন বাড়ে না। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের মাঝে প্রায় ১২ ফুট চওড়া জায়গা আছে, সেখানে কোন ধরনের গাছ লাগানো উচিত তা গবেষণা করেই বন বিভাগ লাগিয়েছে।’