দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো, রাজনৈতিক বাদানুবাদ পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতেই সামনে আসে প্রমত্তা পদ্মাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চ্যালেঞ্জ।
২০১৫ সালের শেষ দিকে সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। তিনটি করে ছয়টি পাইলের নিচের দিকে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন প্রকৌশলীরা। এর প্রধান কারণ নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর।
তখন ওই দুটি পিলারের ছয়টি পাইলের ওপরের কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে আরও ২১টি পিলারের পাইলিংয়ের সময় তলদেশে কাদামাটি পাওয়া যায়। নদীর তলদেশে পাথর না থাকায় পাইলিংয়ের কাজ ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ।
ফলে নকশা বদলে পাইলিংয়ের উপরিভাগে করতে হয়েছে স্ক্রিন গ্রাউটিং। স্ক্রিন গ্রাউটিং বা অতিমিহি সিমেন্টের স্তরের মাধ্যমে পাইলের উপরিভাগে ওজন বহনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
পিলার নির্মাণ করতে গিয়ে ৯৮ থেকে ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইলিং করতে হয়েছে। পৃথিবীতে আর কোনো সেতু নির্মাণে এতটা গভীর পাইলিং করতে হয়নি। ফলে এটি একটি বিশ্বরেকর্ড।
পদ্মা সেতুর পাইলগুলোও তিন মিটার ব্যাসার্ধের। অন্য কোনো সেতুর পাইলের ব্যাসার্ধ এত নয়। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইল ৫০ মিলিমিটার পুরু স্টিলের পাইপে মোড়া।
আর এ কাজটি করার জন্যই হাইড্রোলিক হ্যামারের প্রয়োজন দেখা দেয় সেতু নির্মাণে। জার্মানির মিউনিখে তৈরি করা হয় সেই হ্যামার। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল নেদারল্যান্ডসে পোর্ট অফ রটারড্যাম থেকে রওনা হয়ে হ্যামারটি মাওয়া প্রান্তে পৌঁছায় ৫ জুন।
৩৮০ টন ওজনের হ্যামারটি সর্বোচ্চ শক্তি তিন হাজার কিলোজুল। এর সাহায্যে পিটিয়ে পাইলের স্টিলের পাইপগুলো নদীতে পোঁতা হয়।
ওই সময় পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রো হ্যামার।
মিউনিখ থেকে আনার আগে পদ্মা সেতুতে আরও দুটি হ্যামার ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেগুলোর শক্তি ২০০০ এবং ২৪০০ কিলোজুল।
পদ্মায় জার্মান হ্যামারটি আসার ঠিক সাত দিন পর, ২০১৭ সালের ১৩ জুন জাজিরা প্রান্তের ৪১ নম্বর পিলারের বাকি থাকা দুটি পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। এরপর ৩৪, ৩৩, ৩২, ৩১ এভাবে পর্যায়ক্রমে মাওয়ার দিকে এগোতে থাকে বিশ্বের শক্তিশালী হ্যামারটি।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত হ্যামারটিও ছিল বিশেষ ধরনের। যমুনাতেও একই কোম্পানির হ্যামার ব্যবহার হয়েছিল, তবে সেটা এত বড় ছিল না। পদ্মায় যেহেতু ডেপথ বেশি, তাই হ্যামারের ক্যাপাসিটিও বেশি লেগেছে।’