কুড়িগ্রামে বন্যার কারণে চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে গর্ভবতী মা ও শিশুদের। দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি থাকায় তারা একদিকে যেমন পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না, অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবাও।
কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর তীর ঘেঁষা সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম গ্রামে গিয়ে দেখা হয় অন্তঃসত্ত্বা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। এক মাস পরই তার বাচ্চা প্রসবের নির্ধারিত সময়। কিন্তু পাহাড়ী ঢলে আকস্মিক বন্যার কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ ঘরবন্দি হয়ে আছেন তিনি। বাড়ির চারদিকে থৈথৈ পানি।
এ অবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার অভাবে অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে আছেন ফাতেমা। একই এলাকার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা জেমিন আক্তার সহ বেশ কয়েকজন গর্ভবতীর একই অবস্থা।
প্রায় প্রতি বছরই বন্যার কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় দারিদ্র্যপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলাকে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ অবস্থায় গর্ভবতী মা, নবজাতক সহ শিশুদের নিয়ে চরম দুর্দিন অতিবাহিত করছে জেলার শত শত পরিবার।
এমন দুর্যোগের দিনে শিশুদের খাবার বলতে চাল, গম, ভুট্টার গুড়াই সম্বল। ফলে দারিদ্রপীড়িত এই জেলার চরাঞ্চলে মা ও শিশুরা পুষ্টিহীন হয়ে পড়ছে।
ফাতেমা বলেন, ‘৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমি। চারপাশে পানি আর পানি। পিছলা মাটি ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। খাবারের কষ্ট। নিজেও বের হতে পারি না। আবার ডাক্তার নিয়ে আসাও যায় না। খুব কষ্টে দিন কাটছে।’
সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা জেমিন জানান, বন্যার এই সময়টিতে স্বামীর আয় রোজগার থেমে গেছে। ফলে একদিকে চলাফেরার কষ্ট, অন্যদিকে আর্থিক টানাপোড়েন গর্ভবতী মায়ের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বন্যায় গর্ভবতী মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত একটি পরিবার
জেমিনের শাশুড়ি বিবিজন বলেন, ‘বন্যার মধ্যে খাবারের খুব কষ্ট। গর্ভবতী বউকে যেখানে তিন বেলা খাওয়াতে পারি না, সেখানে পুষ্টিকর খাবার দেই কীভাবে! বানের পানিতে ডাক্তার আসতে পারে না, আমরাও যেতে পারি না।’
সন্তানদের নিয়ে বিপদে আছেন জানিয়ে হাতিয়া গ্রামের রেনুফা বেগম বলেন, ‘৬ দিন ধরে পানিবন্দি আছি। খাবার যা ছিল- কম কম খেয়েও তা শেষ হয়ে গেছে। এখন ঘরে কোনো খাবার নেই। এক মুঠ আটা ছিল, তা দিয়ে চিতই বানাই দিছি বাচ্চা দুটিকে। গরিব মানুষের পুষ্টিকর খাবার ভাত, আলু, ডাল এগুলোই। বড়লোকি খাবার চোখে দেখি না।’
উলিপুর হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় অসংখ্য গর্ভবতী মা সহ কয়েক শ শিশুও রয়েছে। বন্যায় তারাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার।
এদিকে, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ‘বন্যার মধ্যে রান্না করা, থাকা এবং যোগাযোগে সবচেয়ে বেশি কষ্ট। গর্ভবতী মা সহ অন্য যে কেউ অসুস্থ হয়ে স্থানীয় মেম্বার কিংবা আমাকে জানালে চিকিৎসক তাদের বাড়িতে গিয়ে সেবা নিশ্চিত করবে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনজুর এ মুর্শেদ জানিয়েছেন, বন্যায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য বিভাগ সমন্বয় করে বানভাসী মানুষের জন্য কাজ করছে। তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ৮৫টি মেডিক্যাল ও ৯টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেবার আশ্বাস দেন তিনি।