ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মিনারুল ইসলাম। বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আয়োজন দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।
তাই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ছুটে এসেছেন পদ্মাপাড়ে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মেয়েকেও।
খুলনার মিনারুল শুধু নিজেই যে এ আনন্দে অংশ নিতে এসেছেন তা-ই নয়, নিজের আনন্দ বিলাচ্ছেন সবার মাঝে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মিনারুল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আনন্দ আয়োজনে যোগ দিতে এসেছেন নৌকায় চড়ে। নিজের বেতনের টাকা দিয়ে মিনারুল নৌকার আদলে তৈরি করেছেন একটি মোটরযান। প্রথম দেখায় মনে হবে একটি নৌকা ছুটে চলছে সড়ক ধরে।
যানটি মনের মতো সাজিয়ে তাতে চড়েই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মাওয়া প্রান্তে। আগামী তিন দিন এ নৌকায় থাকবেন তারা। সঙ্গে আছে কাঁথা-বালিশ। কিছুক্ষণ পরপর রাস্তায় চকলেট ছিটিয়ে আনন্দ বিলাচ্ছেন বাবা-মেয়ে, লাউড স্পিকারে বাজছে দেশাত্মবোধক গান।
এ নৌকা নিয়ে শুক্রবার ফেরিতে চেপে পদ্মা পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে অবস্থান নেবেন মিনারুল। তার ইচ্ছা এই নৌকা নিয়েই ২৬ তারিখ সকালে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন।
মিনারুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কতবার কষ্ট করে এই পদ্মা পাড়ি দিয়েছি তা মনে হলে এখনও মন খারাপ হয়ে যায়। সব সময় ভাবতাম একটা সেতু বুঝি স্বপ্নই থেকে যাবে। আজকে চোখের সামনে এই সেতু দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে চলে এসেছি।
‘নৌকা বানিয়েছি, কারণ নৌকা না থাকলে এই ব্রিজ হতো না। স্বপ্নই থাকত, এই ব্রিজ স্বীকার করতে হলে নৌকার অবদানও স্বীকার করতে হবে।
‘আমার মেয়েকে নিয়ে তিন দিন এখানেই থাকব। আমরা বাচ্চাদের বেড়াতে পার্কে নিয়ে যাই, আর আমি আমার মেয়েকে এখানে নিয়ে এসেছি, কারণ এটাই ওর জীবনের সেরা বিনোদন হয়ে থাকবে।’
মিনারুল বলেন, ‘আমি খুব আশা নিয়ে এসেছি যে ২৬ তারিখ সকালে অন্তত একবার আমার এই নৌকা নিয়ে ব্রিজ পার হব। আমাকে পার হতে দেয়া হবে কি না জানি না, তবে সর্বোচ্চ অনুরোধ করব যেন আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ হয়।’
পদ্মা সেতু মিনারুলকে কী দিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সেতু এখন আমাকে ঝড়ের মধ্যেও আটকে রাখতে পারবে না। যখন খুশি বাড়ি যাব, ঢাকায় আসব। কতবার এমন হয়েছে যে ঝড়ের মধ্যে লঞ্চে-ফেরিতে আটকা পড়েছি। প্রতিবার এমন মুহূর্তে মনে হতো এটাই বুঝি জীবনের শেষ দিন, আল্লাহ আল্লাহ করে নদী পার হয়েছি। এখন আর ভয় নেই।
‘তা ছাড়া এখন মনভরে মাছ খেতে পারব, আমার মাছ আর নষ্ট হবে না। প্রতিবার বাড়ি গেলে সঙ্গে মাছ নিয়ে আসি। যানজটে পড়ে বরফ দিয়ে আনা মাছও নষ্ট হয়ে গেছে বেশ কয়েকবার। এখন বরফ ছাড়াই মাছ আনব আর তাজা খাব।’
শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মিনারুলের চলন্ত নৌকা মাওয়ার সেতু এলাকা থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত আনন্দ বিলিয়ে গেছে। এমন অভিনব নৌকা দেখে নৌকা ঘিরে ভিড় করছেন সাধারণরা। মুহূর্তগুলোকে করছেন সেলফিবন্দি।