পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে যাতায়াত সহজ হবে- এই বিবেচনায় বরিশাল অঞ্চলের ব্যবসায়িক উদ্যোগ ফরচুন গ্রুপ তার ব্যবসা বাড়াতে চাইছে।
গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, তারা পটুয়াখালীতে কৃষিভিত্তিক কারখানা খোলার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে অন্তত এক হাজার কর্মসংস্থান হবে।
ঝালকাঠি বিসিক এলাকায় একটি প্রযুক্তি কোম্পানি খোলার জন্য ছয় একর জমি নিয়েছে গ্রুপটি, যেখানে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি ফরচুন সুজ ও প্রিমিয়ার সুজ কারখানায়ও লোকবল বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হবে। কারণ নির্মাণসামগ্রী তখন সহজেই পরিবহন করা যাবে।’
এই ব্যবসায়ী জানান, ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের উন্নতির কারণে বেশ কিছু কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বরিশালে তাদের কারখানা খুলতে এগিয়ে আসছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি শিল্পায়নের আশাও করা হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক কারখানা স্থাপনের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী নেতাদের ধারণা, কয়েক লাখ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে দক্ষিণাঞ্চলে এই সেতুর কারণে।
বরিশালের গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পের বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের গার্মেন্টস সেক্টরে এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ করে। সে হিসাবে এই অঞ্চলে দক্ষ জনবল রয়েছে। তারা ব্যয় কমিয়ে আনতে নিজ এলাকায় থেকে কাজ করতে আগ্রহী হবেন বেশি।
আবার পায়রা ও মোংলা বন্দরের সুবিধার কারণে শিল্প উদ্যোক্তাদেরও আমদানি-রপ্তানিতে চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় খরচ কমবে, ঝক্কিও কম পোহাতে হবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে গ্যাস সরবরাহের লাইনও স্থাপন করা হয়েছে, ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পোশাক কারখানার জন্য এই বিষয়টি জরুরি।
বরিশাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘পদ্মা সেতু কমপক্ষে দুই লাখ কর্মসংস্থান করবে। অনেক পোশাক কারখানার মালিক ইতোমধ্যে বরিশাল ও পায়রা বন্দরকে সংযোগকারী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেছেন।
‘ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পণ্য তৈরি করতে কারখানার মালিকরা ভোলা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রায় ৫০ হাজার লোক পোশাক খাতে কাজ করার সুযোগ পাবে এই অঞ্চলে।’
সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, ‘শিল্প সংস্থার অনুমান এক দশকে কেবল বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় ৫০০ থেকে এক হাজার শিল্প স্থাপিত হবে। যেখানে ১০ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে।
‘কেবল মাছের আড়ত নয়, এই অঞ্চলের উদ্যোক্তারা আধুনিক মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারেন। বড় আকারের লঞ্চ নির্মাণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্প স্থাপনেও বিনিয়োগ হতে পারে সমুদ্র উপকূলে। আর এতে করে বেকারত্ব ঘুচবে দক্ষিণাঞ্চলে।’
বরিশালের অ্যালেক্স জুতার স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বলেন, ‘ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলে আমার কারখানার উৎপাদন দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৫০ জন কাজ করছে, তবে সেতু উদ্বোধনের পর শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়াবে ২০০-তে।’
বরিশাল বিসিকের জিম ফুড প্রডাক্টসের স্বত্বাধিকারী তাওহিদ হোসেন জামাল বলেন, ‘আমার কোম্পানিতে এখন প্রায় ১৫০ জন কাজ করছেন। সেতু চালু হওয়ার পর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। আমাকে উৎপাদন বাড়াতে হবে, কারণ রাজধানীতে পণ্য পাঠাতে অনেক কম সময় ও ঝামেলা লাগবে।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, বরিশাল অঞ্চলে গণপরিবহনের সংখ্যা পাঁচ গুণ বাড়বে, যার জন্য আরও অন্তত ১০ হাজার পরিবহন শ্রমিক লাগবে। একই অবস্থা দেখা দেবে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও।’
কুয়াকাটা হোটেল অ্যান্ড মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হোসেন বলেন, ‘বছরব্যাপী এই বিভাগের পর্যটন স্পটগুলোতে, বিশেষ করে কুয়াকাটায় বেশি লোকের ভিড় করায় পর্যটন খাতে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেশ কয়েকটি নতুন হোটেল এবং রেস্তোরাঁ এখন নির্মাণাধীন রয়েছে এবং তাদের পরিচালনার জন্য আরও লোকের প্রয়োজন হবে।’
বরিশাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টুও বলেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘পর্যটন খাতেও প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে। কারণ, এই বিভাগে অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে যেগুলো এখন ব্রিজের কারণে দর্শনার্থীদের কাছে সহজলভ্য হবে।’