ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বরিশালে রওয়ানা হয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন। পথের দূরত্ব কম হওয়ায় মাওয়া দিয়ে যাওয়াই তার জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে তাকে যেতে হচ্ছে পাটুরিয়া দিয়ে।
ঢাকার পোস্তখোলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব মাওয়া যেতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। আর পদ্মা নদীর ৬ কিলোমিটার পাড়ি দিতে ফেরিতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা। সেতু চালু হলে ১০ মিনিটেই পার হওয়া যাবে নদী।
তবে এ ভোগান্তি অবসানে অপেক্ষা কিছু সময়ের। ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকেই শুরু হবে সেতুতে গাড়ি চলাচল।
সাখাওয়াতের মতো একই উচ্ছ্বাস হৃদয় হোসেনের।
নদী পারাপারের এ ঝামেলা আর ঘাটে যাত্রীদের হয়রানিতে অতিষ্ঠ শাখাওয়াত, হৃদয়সহ এ সড়কে যাতায়াত করা লাখো যাত্রীর।
সব বাধা, জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পূর্ণাঙ্গ সেতু। এ দৃশ্য দেখে ঢিমে তালে নদী পাড়াপাড়ে তর সইছে না দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের।
শুক্রবার আরিচাঘাটে ফেরিতে বসে কথা হয় শাখাওয়াতের সঙ্গে। তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বাবা-মা, স্বজনরা থাকেন বরিশালে।
তিনি বলেন, ‘দুই ঈদসহ বছরে চার-পাঁচবার বাড়ি যেতে হয়। ঘাটে আসলে ফেরি লঞ্চ বিড়ম্বনায় পড়লে জার্নির স্বাদ মিটে যায়। যে কারণে পদ্মাসেতু আমাদের কাছে স্বপ্নের সেতু। অপেক্ষায় আছি কখন চালু হবে। শেষ বারের মতো পাটোরিয়া ঘাট দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আশা করি ঢাকায় ফেরার সময় সেতুর ওপর দিয়ে ফিরব।’
তার পাশে বসা হৃদয় হোসেন বলেন, ‘ভাই সেতুর জন্য আমরা যে কত অপেক্ষায় আছি তা বলে বোঝানো যাবে না। এমনও দিন গেছে ঘাটে এসে সারা রাত বসে থাকতে হয়েছে ফেরির জন্য।
আবহাওয়া খারাপ হলে নদী পার হতে পারতাম না। বেশি কুয়াশা হলে ফেরি বন্ধ, ঝড় তুফানে ফেরি বন্ধ, বেশি স্রোত হলেও বন্ধ থাকত। নদীর পারে বসে পার হওয়ার অপেক্ষা যে কত কষ্টের এইডা যারা না করছে তারা ছাড়া কেউ বুঝবে না।’
২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর পদ্মাসেতু নিমার্ণ কাজ শুরু হয়। মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলারের কাজের মধ্য দিয়ে মুল সেতুর কাজ শুরু হয়। ৬ বছরের সেতুর সড়ক অংশের কাজ শেষ হয়।
এখন বাকি রেলের কাজ। ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সেতু কর্তৃপক্ষ।
শুরুতে এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে তিন ধাপে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্প ব্যয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।