খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র প্রমিজ নাগের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুরাইয়া ইসলাম মিমকে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে প্রমিজের চাচাতো ভাই প্রীতিশ কুমার নাগ আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় প্রমিজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাহিদ হাসান মৃধা।
এজাহারে বলা হয়েছে, একই বিশ্ববিদ্যলায়ের লেখাপড়ার সুবাদে প্রমিজ নাগ ও সুরাইয়া ইসলামের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুরাইয়া প্রায়ই প্রমিজের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে বিয়ে করার জন্য সুরাইয়া প্রমিজের ওপর চাপ দেয়া শুরু করেন। কিন্তু দুজন ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় প্রমিজ তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি।
গত ২০ জুন সুরাইয়া আবারও প্রমিজের বাসায় এসে বিয়ের বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রমিজের মাথায় ল্যাপটপ দিয়ে আঘাত করে নানা হুমকি দিয়ে চলে যান।
২২ জুন বুধবার সুরাইয়া আবারও প্রমিজের বাসায় এসে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে পাশের মেসের ছেলেদের নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা প্রমিজকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এ ঘটনার পর সুরাইয়া পালিয়ে যান। পরে প্রমিজকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে বলা হয়, সুরাইয়া ইসলামের নির্যাতন ও প্ররোচনা সহ্য করতে না পেরে প্রমিজ নাগ আত্মহত্যা করেছেন।
কেএমপি সোনাডাঙ্গার সহকারী পুলিশ কমিশনার আতিক বলেন, ‘প্রমিজের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ও শরীরে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার ঘরে বেশ কিছু স্থানে রক্তের দাগ রয়েছে ও সিসিটিভির ফুটেজে মরদেহ উদ্ধারের আগে ওই ঘর থেকে তার এক বান্ধবীকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে দেখা গেছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে প্রমিজের বাবা-মাকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে, কেউ একজন তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করছিলেন। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা লেখা আছে। তাই পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করে আমরা এটি শুধুমাত্র আত্মহত্যা হিসেবে নিতে পারছি না।’
কেএমপি কর্মকর্তা বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে যে মেয়েটিকে প্রমিজের ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে তিনিও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। প্রমিজের সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আসামি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
প্রমিজের বন্ধু আজগর রাজ বলেন, ‘সুরাইয়ার সঙ্গে প্রমিজের সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের বিভাগের সবাই জানত। কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসে কথা-কাটাকাটির পর তিনি প্রমিজকে মারধরও করেছিলেন।’
একই কথা জানিয়েছেন প্রমিজের চাচাতো ভাই দীপংকর নাগও। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ওই তরুণী প্রমিজকে উপহারও পাঠিয়েছেন। সেগুলোর মূল্য ফেরত চাচ্ছিলেন প্রমিজের কাছ থেকে। প্রমিজ বাড়িতে এসব কথা শেয়ার করে টাকাও চেয়েছিলেন।’
প্রমিজ নাগ খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাচিয়া গ্রামে।
তবে তিনি খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার গোবরচাকা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখান থেকেই বুধবার সন্ধ্যায় তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।
সুরাইয়া ইসলাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তার বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বাবুপুর গ্রামে।