দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় আছে বলেই উন্নতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। সরকার গঠন করে জনগণের সেবা করার অধিকার পেয়েছি। গণমানুষের সমর্থন নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই এগিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনার সূত্রপাত করেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আর কখনও পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না। কারও কাছে হাত পেতে চলতে হবে না। এ জন্য বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি।’
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির সাত মাসের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে একটি বৈরী মনোভাব দেখা যায়। বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়ার প্রচেষ্টাসহ আর্থসামাজিকভাবে আমাদের শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণেরই সংগঠন। আওয়ামী লীগ সব সময় দেশের শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছে। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে।
‘২৩ বছরের সংগ্রাম ও জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশ নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেয়া।’
স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নামের সঙ্গে স্বাধীনতা ও অধিকার জড়িত। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করে সংবিধান দিয়েছিলেন জাতির পিতা। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দেয় বাংলাদেশকে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা কেবল জাতির পিতাকে হারাইনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিল। জয় বাংলা স্লোগান নির্বাসিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা নিয়ে দেশ চলতে থাকলে দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, মানুষের সেবা করা আওয়ামী লীগের কর্তব্য ও দায়িত্ব। সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি, যখনই বাংলার মানুষ কোনো সমস্যায় পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এবার সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যায়ও সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এগিয়ে গেছে। এটা আমাদের আদর্শ। এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। জনগণের মাঝে খুঁজে পেয়েছিলাম আমার হারানো বাবা-মায়ের স্নেহ। হারানো ভাইয়ের স্নেহ। কাজেই এ দেশের মানুষের জন্য যেকোনো আত্মত্যাগে আমি সব সময় প্রস্তুত।’