রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (আরএসটিপি) অধিকাংশ প্রস্তাবনা প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রকল্পের সমীক্ষা চলছে, কোনোটির বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ হচ্ছে, আবার কোনোটির অবকাঠামো বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে জানা গেছে। পুরো পরিকল্পনাটি ২০৩৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা আরএসটিপি-বিষয়ক একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। আয়োজিত গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট এবং এই যানজটের ফলে হাজার হাজার কর্মঘণ্টা প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে। গণশুনানিতে সবার মতামত এবং সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি যুগোপযোগী পরিবহন পরিকল্পনা প্রয়োজন। ঢাকা শহর এবং তার আশপাশে গড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এবং নরসিংদী শহরের যান চলাচল ব্যবস্থা ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আছে, যার জন্য একটি সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা প্রয়োজন।
আরএসটিপির প্রকল্প পরিচালক রবিউল আলম জানান, আরএসটিপি প্রকল্পের মিড-টার্ম রিভিউ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কনসাল্টিং ফার্মের নিয়োগ দেয়া শেষ হয়েছে। আরএসটিপিতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবহন পরিকল্পনা ছিল, যা চলমান রয়েছে। তবে দ্রুত পরিবর্তনশীল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে ডিটিসিএ আরএসটিপি হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে। আরএসটিপি মিড-টার্ম রিভিউ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান পরিকল্পনা সংশোধন করা হবে এবং এ ব্যাপারে সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
গণশুনানির সভাপতি ও ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘আরএসটিপির অধিকাংশ প্রস্তাবনা বর্তমানে প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পুরো পরিকল্পনাটি মোট চার ধাপে- প্রথম ধাপে ২০১৬ থেকে ২০২০; দ্বিতীয় ধাপে ২০২১ থেকে ২০২৫, তৃতীয় ধাপে ২০২৬ থেকে ২০৩০ এবং চতুর্থ ধাপে ২০৩১ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘বর্তমানে ডিটিসিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মিড-টার্ম রিভিউ অফ আরএসটিপি প্রকল্পের কাজ চলছে। শিগগিরই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। তাই ঢাকাকে আধুনিক ও টেকসই নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পিত উন্নয়নে এটি সুবর্ণ সুযোগ।’
তিনি বলেন, ‘আজকের গণশুনানিতে পাওয়া সব সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সভায় পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দীন জানান, আরএসটিপির মূল প্রকল্প এসটিপি নামে ২০০৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল। এসটিপিতে অনেক চমৎকার ও টেকসই পরিবহন প্রস্তাবনা ছিল।
তিনি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকার ভেতরে নতুন করে সৃষ্ট যানজট নিরসনে আউটার রিং রোড বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেন।
সভায় ওয়েবিনারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. হাদীউজ্জামান বলেন, আরএসটিপি বাস্তবায়নের জন্য অনেকের অনেক ধরনের মতামত রয়েছে, তবে তা গবেষণাভিত্তিক ফলাফলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিত। আরএসটিপি ট্রান্সপোর্ট মডেল গতানুগতিক ৪ স্টেপ মডেল না হয়ে সেটা ৫ স্টেপ মডেল হওয়া উচিত, যেখানে পরিবহনের সঙ্গে ভূমি ব্যবহারের সমন্বয় করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘মিড-টার্ম রিভিউ আরএসপিটি প্রকল্পের সব সার্ভে তথ্য-উপাত্ত পাবলিক করে দেয়া উচিত, যাতে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ডাটা যাচাই করা যায়।