বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে এখন সগর্বে দাঁড়িয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি সারা দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করবে এই সেতু।
সেতু নির্মাণের শুরুতে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীরা প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর তৈরি হয়েছিল তীব্র অনিশ্চয়তা। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের টাকায় সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণাকে সফল করতে অর্থায়নে অঙ্গীকার নিয়ে পাশে দাঁড়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অগ্রণী ব্যাংক। একক ব্যাংক হিসেবে তারা এই প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিয়েছে।
পদ্মা সেতুতে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের একক ব্যাংক হিসেবে থাকতে পেরে গর্বিত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম । সাক্ষাৎকারে তিনি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সংকটকালে এই ব্যাংকের ভূমিকা।
শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। মাথা উঁচু করে রাখার মতো বিষয়। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। তারই যোগ্য উত্তরসূরি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার ফলে এই সেতু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
‘বিশ্বব্যাংক চলে যাওয়ার পর পদ্মা সেতু হবে কি না তা নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিলাম। একটা বায়বীয় অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর অচলাবস্থা তৈরি হয়। এই সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে- এমন স্বপ্ন যখন দেখছি, ঠিক তখন সেই স্বপ্নভঙ্গের মতো অবস্থা।’
পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্প তুলে ধরে শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে অচলাবস্থার সময় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এটি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেতুর ফরেন কারেন্সি আসবে কোথা থেকে সে বিষয়ে তখন আলোচনা চলছিল। অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা বলেছিলাম, আমরা সব ডলার সরবরাহ করব। পুরো প্রকল্পে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এখন পর্যন্ত আমরা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছি। একক ব্যাংক হিসেবে শুরু থেকে আমরা সব ফরেন কারেন্সি সরবরাহ করেছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভর্নর ড. আতিউর রহমানের ভূমিকাকেও ধন্যবাদ দিচ্ছেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফরেন কারেন্সি সরবরাহের ব্যাপার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের নীতিসহায়তা দিয়েছে। আমরা যখন প্রস্তাবে রাজি হয়েছি তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আমাদের পাশে আশ্বাস দিয়েছে। তবে অগ্রণী ব্যাংক একাই এই অর্থ নিশ্চিত করতে পারায় দেশের রিজার্ভে কোনো প্রভাব পড়েনি।’
২০১২ সালে অগ্রণী ব্যাংকে পদ্মা সেতুর হিসাব খোলা হয়। ডলার সরবরাহ শুরু হয় ২০১৩ সালে। এখন পর্যন্ত মোট ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে ব্যাংকটি। আরও অন্তত এক বিলিয়ন ডলার এই প্রকল্পে জোগান দিতে হবে। সেই বৈদেশিক মুদ্রাও রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংক সরবরাহ করবে বলে জানান শামস-উল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অগ্রণীর পরিচালনা পর্ষদ, বিশেষ করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের সহায়তা করেছেন। তার সঠিক নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে শামস-উল ইসলাম বলেন, আমরা দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এখন কাজ করছি। এরপর আমাদের লক্ষ্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এক নম্বর ব্যাংক হওয়া।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন হচ্ছে। তা শেষ হলে ডিজিটাল কার্যক্রমে আরও এগিয়ে যেতে পারব। তখন সব কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ই-অগ্রণী অ্যাপের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট খোলার কাজটি করতে পারছেন গ্রাহক।’