বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চসেবাতেও উন্নতির আশা

  •    
  • ২৩ জুন, ২০২২ ২৩:৫০

পদ্মা সেতুর কারণে নৌপরিবহন খাতে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জ নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করছে। লঞ্চসেবা আরও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আয়েশি যাত্রা নিশ্চিতের ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে ঢাকা থেকে ‍দক্ষিণাঞ্চলে মানুষের যাতায়াত কয়েক গুণ বাড়বে। প্রশ্ন উঠছে, এতে কি দক্ষিণের ঐতিহ্যবাহী লঞ্চসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

বিষয়টি নিয়ে ভাবনায় লঞ্চমালিকেরাও। তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চে যাত্রী নিশ্চিতভাবে কমবে, আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখিও হতে হবে। তবে এই চ্যালেঞ্জ নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করছে। লঞ্চসেবা আরও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আয়েশি যাত্রা নিশ্চিতের ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।

পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে ৩০ ভাগ যাত্রী কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে চলাচলকারী কুয়াকাটা-২-এর মালিক আবুল কালাম খান। আগামীতে লঞ্চসেবার মান আরও বাড়াতে এখন থেকেই মনোযোগী তিনি।

আবুল কালাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ধরে নিয়েছি, আমাদের ৩০ ভাগ যাত্রী কমে যাবে। এখন এটাকে পুনরুদ্ধার করতে গেলে, আমাদের সেবার মান বাড়াতে হবে। আমাদের সার্ভিসে কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেটা সংশোধন করতে হবে। সেবাগুলো আপগ্রেড করতে হবে। এই বিষয়গুলো ঠিক করলে সাধারণ যাত্রীরা কখনই নদীপথে যাতায়াতে আগ্রহ হারাবেন না।‘

সামনের দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন নৌযাত্রী পরিবহন সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের লঞ্চের ব্যবসা এখন দিন আনি দিন খাইয়ের মতো অবস্থায় পৌঁছেছে। আমাদের ৭০০ লঞ্চের মধ্যে ৬০০-এর অবস্থাই খারাপ।

‘এখন পদ্মা সেতুতে ট্রাবল ফ্রি মুভমেন্ট হলে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা ধসে যাবে। আর ট্রাবল ফ্রি না হলে কিছুটা ব্যবসা হবে। লঞ্চ ব্যবসা এই রুটে, ইট ইজ গন।’

দেশে মোট যাত্রীর এক-তৃতীয়াংশ নৌপথে যাতায়াত করেন বলে জানান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যখন যাত্রী পাব না তখন আস্তে আস্তে জাহাজগুলো স্ক্র্যাপ হয়ে যাবে। বহু লোকের ব্যাংকঋণ আছে, তারা অসম্ভব সমস্যায় পড়বেন। তারা ঋণখেলাপি হবেন।’

তবে লঞ্চ ব্যবসায় পদ্মা সেতুর প্রভাব পুরোপুরি বুঝতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন লঞ্চমালিক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

কুয়াকাটা-২ লঞ্চের মালিক আবুল কালাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রীরা বাসে যাওয়ার জন্য কতটা পরিমাণে আগ্রহী, তা আমাদের দেখতে হবে। এটি সেতু চালুর আগে সঠিকভাবে বলা মুশকিল। পরিস্থিতি দেখে আমাদের পরিকল্পনা নিতে হবে।

‘আমাদের লঞ্চের গতি আগের তুলনায় বেড়েছে। সুন্দরের দিক থেকে আগের থেকে সুন্দর হয়েছে, খাবারের মান ভালো হয়েছে। তবে টিকেটিংয়ের জায়গায় এখনও গ্যাপ আছে। আমরা পুরোদমে অনলাইন টিকেটিং চালু করতে পারিনি। এদিকে নজর দিতে হবে।’

গুলিস্তান থেকে সদরঘাটের রাস্তা যানজটমুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশন ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করার উদ্যোগও নিচ্ছেন লঞ্চমালিকরা। আবুল কালাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে সদরঘাটের রাস্তাটি যানজটমুক্ত রাখা বা ওয়ান ওয়ে করে দেয়া উচিত। এতে যাত্রীরা সহজেই সদরঘাট আসতে পারবেন। এ ছাড়া ঘাটে কুলির অত্যাচার বন্ধ করা গেলে যাত্রীরা ফেরত আসবেন।’

পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণের নৌপথে যাত্রীসেবার মান বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. এস এম সালেহ উদ্দিন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যাত্রীর অভাব নেই। দেশের যে জেলাতেই যাতায়াত করেন না কেন, মানুষের ঘনত্ব অনুযায়ী পর্যাপ্ত যাত্রী আছে।

‘পদ্মা সেতু হওয়ার পর মানুষ নৌপথেও আরাম করে আসতে পারবে, আবার সেতু দিয়েও দ্রুত সময়ে যেতে পারবে।’

নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি তো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। আমরা যে লঞ্চে যাই, সেই যাত্রা বর্ণনাতীত। এখন পদ্মা সেতু হওয়ার পর অনেক আরাম করে যাওয়া যাবে। লঞ্চগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যেতে পারবে। নৌপথে যাতায়াত আরও বেশি সুশৃঙ্খল হবে।

‘আরেকটা দিক হলো ছোট ছোট লঞ্চগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। যাত্রীরা ছোট লঞ্চের পরিবর্তে বিলাসবহুল লঞ্চে যাতায়াত করবে।’

লঞ্চমালিকদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতাও কমবে বলে মনে করছেন ড. সালেহ উদ্দিন।

লঞ্চমালিকরা ব্যবসায় ধসের যে আশঙ্কা করছেন তা উড়িয়ে দিয়ে এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একটা লঞ্চের যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা যদি ৫০০ হয়, কিন্তু তারা নিচ্ছে ৭০০ জন। এই যে ২০০ বেশি বহন করছে, এতে তার আয় বেশি হচ্ছে। এই অতিরিক্ত ২০০ হয়তো কমে যাবে।’

ধারণক্ষমতা অনুযায়ী লঞ্চগুলো যাত্রী বহন করলে খরচ কমে আসবে বলেও মনে করছেন ড. সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘লঞ্চ ব্যবসায়ীরা ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করলে তাদের ফুয়েল কস্ট কমে যাবে। কারণ ৫০০ যাত্রী টানার ক্ষমতাসম্পন্ন লঞ্চে ৭০০ যাত্রী বহন করা হলে ইঞ্জিনে প্রেসার পড়ে। স্পেয়ার পার্টসের ক্ষতি হয়। নির্ধারিতসংখ্যক যাত্রী বহন করলে এটা ঘটবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর