বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতুর দাবি তোলায় যাকে অনেকে বলেছেন ‘পাগল’

  •    
  • ২৩ জুন, ২০২২ ২৩:৫১

খোকা সিকদার জানান, এ আন্দোলনের কারণে চলতি পথে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। একবার মাওয়া দিয়ে নৌকায় বাড়ি ফেরার সময় লোকজন তাকে ‘শালা পাগল হয়ে গেছে’ বলেও টিটকারী করেছিল।

‘পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা শহরে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। পদ্মার ভাঙন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কষ্টের কথা বলেছি। সেসব কষ্ট লাঘবে পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে তুলে ধরেছি। সবাই এই দাবিকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন করেছেন। ওয়ার্ড থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সভা-সমাবেশ করেছি। ব্যানার-পোস্টার বানিয়েছি। পত্রিকায় নিউজ পাঠিয়েছি। তবে এসব কর্মকাণ্ড চলাকালে অনেক মানুষ টিটকারী করেছে, হাসি-তামাশা করেছে। অনেকে পাগলও বলেছে।’

আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে এসব কথা বলছিলেন ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের এই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এখন শরীয়তপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

পদ্মা সেতু নিয়ে নব্বই দশকের সেই আন্দোলন ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের বিস্তারিত নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন খোকা সিকদার। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মূল প্রেরণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি নিজে ডেকে নিয়ে আন্দোলনে উৎসাহ দিয়েছেন। তার নির্দেশনাতেই এ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।’

খোকা সিকদার জানান, এ আন্দোলনের কারণে চলতি পথে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। একবার মাওয়া দিয়ে নৌকায় বাড়ি ফেরার সময় লোকজন তাকে ‘শালা পাগল হয়ে গেছে’ বলেও টিটকারী করেছিল।

তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রেরণাতেই ১৯৮৬ সালে তারা পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ গঠন করেন। ২১ সদস্যের এই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইত্তেফাকের আব্বাস উদ্দিন আনসারী।

খোকা সিকদার বলেন, ‘হুসেইন মু. এরশাদের সময় যমুনা সেতুর কথা ওঠে। তখনই আমাদের কয়েকজনের উপলব্ধি আসে, আমরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এত কষ্ট করে নদী পার হই। নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে যাতায়াত করি। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা নদীর ওপর সেতু হলে এই কষ্ট দূর হতো।

‘সেই ভাবনা ও উপলব্ধি থেকেই আমি আর আব্বাস উদ্দিন আনসারী ভাইসহ কয়েকজন পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা সবার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করি। ব্যানার-পোস্টার বানানো শুরু করি। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে ঘুরে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলি।’

পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলেন, “পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে পোস্টার ছাপাই। ১৯৮৬ সালের সেই পোস্টারে লেখা ছিল, ‘২১ জেলার ৫ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতু চাই।’”

তিনি জানান, ১৯৮৬ সালে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ গঠনের পর তারা এ কার্যক্রম সবখানে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। খুলনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের জেলাভিত্তিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেসব কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার দলীয় নেতা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার যুব ও ছাত্রনেতারা সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

খোকা সিকদার বলেন, “‍এসব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে আরও একটি পোস্টার করি আমরা। সেখানে লেখা ছিল, ‘পদ্মা সেতু কেন চাই?’ পরে আরেকটি পোস্টার করি, তাতে লেখা ছিল, ‘পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন চাই।’”

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের এই পুরো সময়ে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। অনেকেই আমাদের দাবি নিয়ে হাসি-তামাশা করলেও বিভিন্ন জেলার মানুষকে এই দাবিতে একত্রিত করার কারণে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন চাই স্লোগানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

‘আমরা খুলনা, ফরিদপুর ও ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করি। তখন অনেক সাংবাদিকও বলেন, পদ্মা নদীতে সেতু চান? সেটা তাহলে কোথায় হবে? এমন প্রশ্ন করলে আমি বলি, এটা তো সরকারের পক্ষ থেকে ফিজিবিলিটি যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মাওয়া পয়েন্টেও হতে পারে। এখন সেই মাওয়া পয়েন্ট দিয়েই হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, সেতু দিয়ে চলবে ট্রেনও।’

একদিনের উপহাসের ঘটনা বর্ণনা করতে করতে খোকা সিকদার বলেন, ‘একবার লঞ্চে ফরিদপুরে বোনের বাসায় যাচ্ছি। পথে কেবিন থেকে লোকজন বলে উঠল, এই শালার পাগল পদ্মা নদীতে সেতু চায়! তারপর সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।’

তিনি বলেন, ‘আরেকবার মাওয়া থেকে নৌকায় বাড়ি যাচ্ছি। উত্তাল পদ্মার বড় বড় ঢেউ দেখে সবাই ভয় পেল। আমিও ভয় পেয়ে গেছি। একটা পর্যায়ে নদীর শান্ত এলাকায় পৌঁছালে অনেকেই টিটকারী করতে শুরু করল। বলল, এই নদীতে নাকি সেতু হবে! অনেক সময় হেঁটে যাওয়ার পথেও লোকজন হাসাহাসি করত এই দাবি নিয়ে। বলত, শালা পাগল হয়ে গেছে।’

ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, ‘তাদের এমন উপহাসে আমরা দমে যাইনি। এই সেতুর দাবি নিয়ে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, খুলনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলি। মতবিনিময়, সভা-সমাবেশে পদ্মা সেতুর দাবির কথা বলতে থাকি।

‘এ সময়ে লিয়াকত নামের একজন খুব হেল্প করেছিলেন। আমি আর ইত্তেফাকের আব্বাস উদ্দিন আনসারী ভাইয়ের নেতৃত্বে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। তারপর বিএনপি সরকার এসে সেটা ভেঙে ফেলে। তারপরের ইতিহাস সবাই জানেন। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা নিজের টাকা দিয়ে নিজেই পদ্মা সেতু করলেন।’

পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘যদি কেউ কোনো কাজ আন্তরিকভাবে করার চেষ্টা করেন, সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করেন, সেটা সফল হবেই। আমি যদি এই আন্দোলন করার জন্য কিংবা পোস্টার-ব্যানার তৈরির জন্য চাঁদা তুলতাম, তাহলে হয়তো এই আন্দোলন করা সম্ভব হতো না। নানাজন নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতেন।

‘এখন আমার আর কোনো চাওয়া নেই। সেতু দিয়ে এখন পদ্মা সেতু পার হতে পারব এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পটি ২০০৭ সালের আগস্টে অনুমোদন দেয় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরে সেতুর অর্থায়ন নিয়ে নানা নাটকীয়তা চলে। শেষে আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেতুর সঙ্গে রেলপথও যুক্ত করা হয়।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি শুরু হয় নকশা ও পুনর্বাসন কাজ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন শুধু দৃশ্যমান বাস্তবতাই নয়, খুলে দেয়া হচ্ছে যান চলাচলের জন্যও।

এ বিভাগের আরো খবর