দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি, তবে দলটির সাত নেতাকে দলের পক্ষে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেতু বিভাগের এক কর্মকর্তা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আলাদা করে কোনো আমন্ত্রণপত্র দেয়া হয়নি। তবে ড. ইউনূসকে যে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে সেটি বুধবারই রিসিভ হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।
সেতু বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) রুপম আনোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
‘এর মধ্যে আছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিদেশি কূটনৈতিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ অনেকে’, যোগ করেন তিনি।
বিদেশি কোনো অতিথি অনুষ্ঠানে থাকছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদেশি অতিথিদের মধ্যে আছেন পদ্মা সেতু তৈরিতে যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন, এ ছাড়া আমাদের বিদেশি কর্মীরা, যারা এই সেতু তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তারা আমন্ত্রিত হিসেবে থাকবেন।’
২৫ জুন হতে যাচ্ছে প্রমত্ত পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু উদ্বোধন করবেন। এর পরদিন সেতুতে যানবাহন চলাচল করবে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আর ড. ইউনূস দুজনেরই তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সেতু নিয়ে নানা সময় নেতিবাচক মন্তব্য করার জেরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দেয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা। তার এই মন্তব্যের কারণে বিএনপি বিক্ষোভও করে।
সরকারপ্রধান বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, ষড়যন্ত্র করে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংককে সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় ড. ইউনূসসহ বেশ কয়েকজন জড়িত ছিলেন।
অবশ্য সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা যাবেন না।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শেষ হয় পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজ। আর এর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর পুরোটা দৃশ্যমান হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু নির্মাণে শুরু থেকে অর্থায়ন জটিলতা ছাড়াও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় নদীর তলদেশের ভূস্তরের গঠনজনিত জটিলতা। এ জন্য ৪২টি পিলারের মধ্যে ১৪টির নকশা পাল্টাতে হয়েছে। সেটির সমাধানও হয়েছে অভিনব উপায়ে।
২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর মূল কাজের ভিত্তি স্থাপন করেন।
সরকারের সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়, সেতুটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়বে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ৭ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের।
জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সমীক্ষায় বলা হয়, পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। আর এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২১ হাজার ৩০০ যান চলাচল করবে। ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৬০০টি।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় বলা হয়, পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ১ শতাংশ হারে।