সিলেটে চলমান বন্যায় কৃষি খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভাগের চার জেলাতেই কৃষির ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি দেখেছে সিলেট জেলা।
গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয় সিলেটে। চলতি বছরের এটি তৃতীয় দফার বন্যা, যাকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
বানের পানিতে তলিয়েছে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ ও সিলেটের ৭০ শতাংশ এলাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই বন্যায় বিভাগে আউশ ধানের ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমি, বোনা আমনের ১৫ হাজার হেক্টর ও সবজির প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমি তলিয়েছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। বুধবার উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, তেলিখাল এলাকায় সড়কের পাশে ভেজা ধান শুকাচ্ছিলেন কৃষক সিতারা বেগম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠের সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরে থাকা ধানও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এইগুলা শুকালেও এ থেকে ধান পাওয়া যাবে না।’
মে মাসের বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর এলাকার কৃষক পরীন্দ্র দাসের বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। এবার তলিয়েছে তার আউশের ক্ষেত।
পরীন্দ্র বলেন, ‘বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ক্ষতি পোষাতে ঋণ করে চার একর জায়গায় আউশের ক্ষেত করেছিলাম। এখন এটিও তলিয়ে গেল। না খেয়ে মরা ছাড়া এখন আর আমার সামনে কোনো পথ নেই।’
গেল মাসে পানিতে নেমে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলেছিলেন সদর উপজেলার কান্দিগাঁওয়ের মটু মিয়া। সে যাত্রায় কিছু ধান রক্ষা করতে পারলেও শেষ রক্ষা আর হয়নি। কারণ এবার বানের পানিতে ঘরে মজুত সেই ধান ভেসে গেছে।
আক্ষেপ করে মটু বলেন, ‘পানি আমার সব নিয়ে গেছে। এত কষ্ট করে, এত টাকা খরচ করে ধান তুলেছিলাম। চোখের পলকেই ঢল এসে তা ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন চাষাবাদ ফেলে আমার দিনমজুর হতে হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান জানান, সিলেট জেলায় আউশ ধান তলিয়েছে ২৬ হাজার ৬৭৯ হেক্টর এবং সবজি ডুবেছে ২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমির। হবিগঞ্জে ১৫ হাজার ৭১০ হেক্টর আউশ ধান, ১ হাজার ৫৯৭ হেক্টর সবজি এবং ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন ডুবে গেছে।
তিনি আরও জানান, মৌলভীবাজারে আউশ ধান ডুবেছে ১১ হাজার ৭৪১ হেক্টর, সবজি ডুবেছে ৮০৮ হেক্টর এবং বোনা আমনের জমি ডুবেছে ৩৬২ হেক্টর। আর সুনামগঞ্জে আউশের জমি ডুবেছে ১১ হাজার ৪০৩ হেক্টর ও সবজির জমি ডুবেছে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর।
অধিদপ্তর কর্মকর্তা মোশাররফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠে আমাদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের গোলায় থাকা অনেক ধানও তলিয়ে গেছে। এগুলোর প্রকৃত হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। পেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত।
‘এখনও অনেক এলাকায় পানি বাড়ছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’