হবিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও কয়েকটি এলাকা। বন্যার বিস্তৃতিতে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে মানুষের ভোগান্তি চরমে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, বুধবার দুপুর পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর ও মাধবপুর উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নে প্রায় ৫ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫ লাখ মানুষ। জেলার ২২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ২৩ হাজার ২৩৫টি পরিবার।
সরকারি হিসাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৭২০ জন। স্থানীয়দের দাবি, ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে পানিবন্দি মানুষ। ছবি: নিউজবাংলা
উপদ্রুত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যার প্রভাবে রাস্তাঘাটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাস্তাসহ বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকটাই বন্দি জীবনযাপন করছে কয়েক হাজার পরিবার। জরুরি প্রয়োজনেও গ্রাম থেকে শহরে যেতে পারছেন না অনেকে। পানিতে রান্নার চুলা ডুবে থাকায় বন্ধ তাদের রান্নাবান্না। শুকনা খাবার খেয়েই দিন কাটছে অসহায় মানুষের।
বেশির ভাগ এলাকায় টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। নিজেদের একটা ব্যবস্থা হলেও অনেক মানুষ বিপদে পড়েছেন গবাদিপশু নিয়ে। কোথায় রাখবেন, কী খাওয়াবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা জানান, চার দিন ধরে তারা শুকনা খাবার ছাড়া কিছুই পাননি। সরকারি সহায়তা অপ্রতুল। অনেক জায়গায় এখনও সরকারি-বেসরকারি খাদ্যসহায়তা পৌঁছেনি বলে অভিযোগ আছে।
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, দুর্গতদের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত সরকারিভাবে ১০ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য মজুত আছে আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য মাঠে কাজ করছে ৩০টি মেডিক্যাল টিম।
নবজাতক নিয়ে ঘর ছাড়ছে পানিবন্দি পরিবার। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষি বিভাগ জানায়, বন্যার পানিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ হাজার ৭১০ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন, ১ হাজার ৫৯৭ হেক্টর শাকসবজি এবং ৫০ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল ডুবে আছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানি অনেকটাই স্থির। মাঝেমধ্যে এক সেন্টিমিটার বাড়লেও তা কমে যাচ্ছে। তবে নবীগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার লোকালয়ে বন্যার পানি আরও বাড়ার শঙ্কা আছে। হবিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে।’
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য ইতোমধ্যে ৭০০’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া বন্যার্তদের শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা পাবেন দুর্গতরা।’