বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘চুবনিতে’ আপত্তি: পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে যাচ্ছে না বিএনপি 

  •    
  • ২২ জুন, ২০২২ ১৮:২০

মির্জা ফখরুল বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে, বিশিষ্টদের চুবিয়ে মারতে চান; তাদের আমন্ত্রণে বিএনপি নেতাকর্মীরা যাবেন না।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএনপির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল সরকার; তবে এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি।

বুধবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘এটা আমি খুব পরিষ্কার উত্তর চাই। যারা মানুষ হত্যা করে, যারা এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পদ্মায় ডুবিয়ে মারতে চায়, যারা এ দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান বয়ে আনা ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চুবিয়ে মারতে চায় তাদের আমন্ত্রণে বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী যেতে পারে না।’

পদ্মাসেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘সত্যের অপলাপ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ প্রেস কনফারেন্সে আগের মতোই স্বভাবসুলভ বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্যের মধ্যে তিনি যে মিথ্যাচার করেন তার আবার প্রমাণ রেখেছেন।

‘এর মধ্যে আছে- ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলা। আমাদের কাছে প্রমাণ হচ্ছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি রিপোর্ট যেটা হচ্ছে, মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তের যেটা বর্তমানে আছে। এই রিপোর্টের কপিও আছে আমাদের কাছে। আপনারা চাইলে দেখতে পারেন। এই রিপোর্টটি ২০০৪ সালে মার্চের ৩ তারিখ সাবমিট করা হয়েছিল। এটা হচ্ছে ইন্টারিম রিপোর্ট অন দ্যা ফিজিবিলিটি স্টাডি অব পদ্মা ব্রিজ।

ফখরুল বলেন, ‘একটা ফিজিবিলিটি রিপোর্ট অফিসিয়ালি দেয়ার পরেও কী করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলতে পারেন যে, বিএনপি গর্ভমেন্ট আসার পর এটাকে বন্ধ করে দেয় এবং এটা কোনো কাজ করেনি। এই ফিজিবিলিটি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তারা পরবর্তীতে কাজ করেছেন। তখনই এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাপানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফান্ডের জন্য আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা করা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সমানে বলে যাচ্ছেন, বিএনপি সরকার এটা বন্ধ করে দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। কাজ শুরু করার পরে বিশ্বব্যাংক যখন ফান্ড বন্ধ করে দিল দুর্নীতির কথা বলে তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়েছে। সেটার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ী করেন, ড. ইউনূসকে দায়ী করেন। কোথায় পেলেন তিনি? কীভাবে দেখলেন যে, দুর্নীতির কথা বিএনপি বা ড. ইউনূস তুলেছে।

‘বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা তোলার পরে দেশবাসী জানল, আমরা জানলাম সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে। আজ এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট এখন ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ এবং বিএনপিকে জনগণের সামনে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা-এগুলোর কোনটাই কাজ হবে না। কারণ দেয়ার আর টুলস অ্যান্ড ডুকমেন্টস।’

মির্জা ফখরুল সমীক্ষার বিবরণী তুলে ধরেন বলেন, ‘এই সমীক্ষার সামারিতে বলা হয়, এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৫ মিটার, পাইলের সংখ্যা ২৬৮টি, নদী শাসন ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার, সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য (উভয় পার্শ্বে) ১২ দশমিক ১৬৩ কিলোমিটার, প্রকল্পের (মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে) ইআইআরআর ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ রেলসহ, বিসিআর ১ দশমিক ৩৮, ভূমির পরিমাণ ৭৯০ দশমিক ৫০ হেক্টর, ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৭০।

সমীক্ষার বিবরণী তুলে ধরেন তিনি আরও বলেন, ‘তখনকার সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৫ সালে মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মাসেতু দিয়ে দৈনিক ২১ হাজার ৩০০টি যানবাহন পারাপার করবে এবং ২০২৫ সালে হবে ৪১ হাজার ৬শ টি। এই সেতুর নির্মাণ কাজ ২০০৮ সালের অক্টোবর নাগাদ শুরু এবং ২০১৩ সালের মার্চ নাগাদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটাই পদ্মাসেতুর সমীক্ষা। এটাকেই কেন্দ্র করে তারা পদ্মাসেতুর পরবর্তী কাজ করেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

২৫ জুন হতে যাচ্ছে প্রমত্ত পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু উদ্বোধন করবেন। এর পরদিন সেতুতে যানবাহন চলাচল করবে।

এর আগে এদিনই বেলা ১১টার দিকে প্রমত্ত পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিএনপির সাত নেতাকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। তবে আমন্ত্রণের কার্ড পাননি দলের চেয়ারপারসন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া।

সেতু বিভাগের উপসচিব দুলাল চন্দ্র সূত্রধর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন। আমন্ত্রিত বিএনপির সাত নেতার মধ্যে নাম নেই রিজভীরও।

যে সাত নেতা আমন্ত্রণ পেয়েছেন তারা হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: নিউজবাংলা

বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি সেতু বিভাগ থেকে। অবশ্য গত ৫ জুন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, দুর্নীতির দুই মামলার সাজা স্থগিত হওয়ার পর শর্ত সাপেক্ষে কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে আইনি কোনো বাধা নেই।

এই সেতু নিয়ে নানা সময় নেতিবাচক মন্তব্য করার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দেয়ার কথা বলে তুমুল আলোচনা তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই মন্তব্যের কারণে বিএনপি বিক্ষোভও করেছে।

দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু উদ্বোধনের আয়োজনটি জমকালো করতে চাইছে সরকার। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার নানা বাধা অতিক্রম করে এ সেতুটি নির্মাণ করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর