দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর ভাঙনপ্রবণতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দলগুলো ভাঙতে ভাঙতে ‘দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলনে’ পরিণত হয়েছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। দেশে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল না থাকায় আক্ষেপ করে এই মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দেশের বামপন্থি দলগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘তারা তো ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র হতে হতে মানে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন… দাঁড়ি বসবে না কমা বসবে, কমা বসবে না সেমিকোলন এই করতে করতে ভাঙতে ভাঙতে তাদের এই অবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বাম হয়ে কখনও ডানে কাত হয়, কখনও বামে কাত হয়, তাদের তো এই অবস্থা।’
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি একেকটা সিটে কয়জনকে নমিনেশন দিয়েছিল, সেটা কী আপনাদের মনে আছে? এক সিটে একজনকে সকালে দেয়, দুপুরে সেটা পরিবর্তন হয়ে আরেকজন হয়। তারপর তৃতীয় দফায় আরেকজনের নাম দেয়। যে যত বেশি টাকা দিচ্ছে তাকে নমিনেশন দিয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় যখন একটা দল তাদের নির্বাচনে প্রার্থী দেয়, ঢাকা থেকে তাদের এক নেতা একজনকে দিচ্ছে তো, লন্ডন থেকে আরকেজনকে দিচ্ছে বা অমুকের কাছে টাকা চাচ্ছে, এই টাকা না দিলে সে নমিনেশন পাবে না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘দিনে যদি আপনি তিনবার নমিনেশন বদলান, তারপর দেখা গেল মাঝখানে নির্বাচন ছেড়ে চলে গেল। এটা কী অস্বীকার করতে পারবে বিএনপি? তাহলে এটা পার্টিসিপেটরি ইলেকশন হয়নি এটা কীভাবে বলেন। আর যখন আপনি নির্বাচনের মাঝপথে চলে যান, তখন তো মাঠ ফাঁকা। তখন পাবলিকের যা খুশি তাই করতে পারে। সেই দোষটা কাকে দেবেন? সেটা তো আওয়ামী লীগকে দিতে পারেন না। আর সেই বাস্তবতা সবাই ভুলে যায়।’
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তখনই, আর মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করবে তখনই, তখন তাকে দেখাতে হবে সেই দল নির্বাচন করে জয়ী হলে কে হবে সরকারপ্রধান। এটা তো মানুষ আগে বিবেচনা করে, করে না? এটা শুধু আমাদের দেশে না, পৃথিবীর সব দেশেই।
‘তারা যে ইলেকশন করবে, তারা কাকে দেখাবে? সাজাপ্রাপ্ত ফিউজিটিভকে? আর সে তো এ দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে এখন ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে বসে আছে। কত টাকা ইনভেস্ট করলে সহজে ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া যায়? একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে কীভাবে ব্রিটিশ নাগরিক হলো- সেটা একটু খোঁজ করবেন?’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার যুক্তরাজ্যের নাগরিক হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সেটা একটু খোঁজ করেন না। সেটা তো আপনারা করেন না। সেটা করলে তো বের হয়ে আসে। এই নিয়ে তারা কী ইলেকশনটা করবে? সেটাই তো বড় কথা। এখানে গণতন্ত্রের দোষটা কোথায়।’
আর তখনই দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকা নিয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘আছে কে সেটা বলেন না? একটা ভালো শক্তিশালী দল করে দেন। ঠিকাছে, মাঠেই দেখা হবে। মাঠে আমরা দেখব কম্পিটিশনে। ঠিকাছে, জনগণ যাকে চায়।’
তাই বিএনপির জন্য আবেগপ্রবণ হওয়ার কোনো অর্থ নেই বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ওদের জন্য কান্নাকাটি করে লাভ নেই। ওরা ইলেকশনটা করবে কী নিয়ে? পুঁজিটা কী, সমস্যাটা তো ওইখানেই। বাংলাদেশে কী একটাও যোগ্য নেতা নেই যাকে তারা দলের চেয়ারম্যান করতে পারে। তাহলে তো তাদের এই দুরবস্থা হয় না।’
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দল করেন। পার্টিসিপেটরি করে দেব। একটা কথা মনে রাখবেন, জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। সেটা থাকব না।’