বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউনূসদের প্রতি রাগ নেই, তারা নিজেরাই বুঝবে: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২২ জুন, ২০২২ ১৬:১৭

‘ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত স্বার্থ, সেই স্বার্থের জন্য আমাদের বিরুদ্ধে একটি দুর্নাম রটানো হয়। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমারই দেশের কিছু নাগরিক এবং বিশেষ একজন নাগরিক তিনি এ ব্যাপারে সব থেকে বেশি উদ্যোগ নেন। এর সঙ্গে আরও কয়েকজন যারা, তারা ছিল। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য কোনো মানুষ কোনো দেশের এত বড় ক্ষতি করতে পারে বা যার মধ্যে এতটুকু দেশপ্রেম বা জনগণের প্রতি এতটুকু দায়িত্ববোধ থাকে তারা এটা করতে পারে, এটা আমার জানা ছিল না।’

এক যুগ আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে যারা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার করেছিলেন, তাদের প্রতি আর রাগ ধরে রাখছেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, তিনি আশা করেন, তারা যে দেশের ক্ষতি করেছেন, এটা তারা নিজেরাই বুঝবেন।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোয় সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে সাংবাদিকদের পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য কেউ দেশের এত বড় ক্ষতি করতে পারে, এটা কখনও কল্পনাও করতে পারেননি বলেও জানান তিনি।

সেতু হয়ে যাওয়ায় এখন আর কারও প্রতি রাগ, ক্ষোভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘তারা নিজেরাই তো বুঝবে, যদি তাদের অনুশোচনা থাকে।’

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। ঢাকার তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর গণমাধ্যমকর্মীরা নানা বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন। একটি প্রশ্ন ছিল, পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের পর এর অর্থায়ন থেকে যেসব উন্নয়ন সহযোগী সরে গেছে, তারা কী আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানিয়েছে?

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্ররোচনাটা কে দিয়েছিল সেটাকে আগে ধরেন। সেটাই তো বড় কথা। তাদের কারা উৎসাহিত করেছিল, কে করেছিল? আমি আগেই বললাম না, নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী? কথাটার অর্থ হচ্ছে, আপনি বাইরের লোকদের কী দোষ দেবেন। যারা ছিল, তারা তো নেই। চলে গেছে।’

সূচনা বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূস ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত স্বার্থ, সেই স্বার্থের জন্য আমাদের বিরুদ্ধে একটি দুর্নাম রটানো হয়। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমারই দেশের কিছু নাগরিক এবং বিশেষ একজন নাগরিক তিনি এ ব্যাপারে সব থেকে বেশি উদ্যোগ নেন।

‘এর সঙ্গে আরও কয়েকজন যারা, তারা ছিল। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য কোনো মানুষ কোনো দেশের এত বড় ক্ষতি করতে পারে বা যার মধ্যে এতটুকু দেশপ্রেম বা জনগণের প্রতি এতটুকু দায়িত্ববোধ থাকে তারা এটা করতে পারে, এটা আমার জানা ছিল না। ব্যাংকের সামান্য একটা এমডির পদ যে এত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ব্যক্তিবিশেষের কাছে, এটা আমার কাছে অবাক লাগে। ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়ার কথা, তারা তা বন্ধ করে দেয়। সরে দাঁড়ায়। এর মধ্যে কিছু লোক আছে যারা অন্যায়ভাবে, অন্যায্যভাবে কিছু বিষয় নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে।’

বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগশেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচনের একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক, কারিগরি কমিটিকে একটি প্রাক-যোগ্য ঠিকাদারকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত থাকার কারণে বাদ দিতে বলে এবং একটি প্রাক-যোগ্যতায় অযোগ্য ঠিকাদারকে যোগ্য করতে বলে।’

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাক-যোগ্য কোয়ালিফায়েড দরদাতাকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে বাদ দেয়। কিন্তু প্রাক-যোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ে অযোগ্য দরদাতাকে অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট দেয়ায় যোগ্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, যা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পছন্দ করেনি।’

প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে একটা কথা আছে না, ‘নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী?’ বিশ্বব্যাংককে আমি কীসের দোষ দেব? তারা বন্ধ করল কাদের প্ররোচনায়। সেটা তো আমার দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায়, তারা বন্ধ করেছিল। এটাই তো বাস্তবতা।’

নিজেদের অর্থায়নের পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তে যারা কটু কথা বলেছেন তাদের বিভিন্ন উক্তিও সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করেন সরকারপ্রধান।তিনি বলেন, ‘যারা বিভিন্ন কথা বলেছে, কিছু কথা আমি ওঠালাম, কথা তো আরও আছে। সেখানে আমার তো কিছু বলার দরকার নেই। তারা নিজেরাই তো বুঝবে, যদি তাদের অনুশোচনা থাকে। না থাকলে আমার কিছু বলার নেই। এখানে আমার কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা যারা বলছে, তারা বুঝতেছে। তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছি। আমরা সবাইকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাব পদ্মা সেতু দেখাতে।’তবে তাদের বিশ্বব্যাংকের ওই সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বদরবারের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা ও সক্ষমতা জানান দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বরং আমি ধন্যবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই এ জন্য যে এ ঘটনা ঘটেছিল বলে সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় নিজেরা পদ্মা সেতু করার ফলে আজকে বাংলাদেশে সম্মানটা ফিরে এসেছে। নইলে আমাদের দেশ নিয়ে একটা পারসেপশন ছিল, একটা মানসিকতা ছিল যে আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারব না।

‘পরনির্ভরশীলতা, পরমুখাপেক্ষিতা- এটাই কিন্তু আমাদের মাঝে ছিল। দৈন্যতা ছিল। অন্তত বিশ্বব্যাংক যখন এই টাকাটা তুলে নিয়ে গেল, আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি, সেই অচলায়তন ভেঙে একটা আত্মমর্যাদাশীল জাতি, আমরা যে পারি সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। তাতে আমি খুশি।’

পদ্মা সেতুর টাকা বিশ্বব্যাংক থেকে উদ্ধার করা গেছেপদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে গেলেও সেই অর্থ বাংলাদেশ উদ্ধার করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অর্থ সেতু নির্মাণে ব্যবহার না হলেও অন্য উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের আমরা কিন্তু অংশীদার। তারা কিন্তু কোনো অনুদান দেয় না। আমরা লোন নিই।… আমরা কিন্তু সেখান থেকে লোন নিই, টাকা নিই। যে টাকাটা বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে, সেই টাকা নষ্ট করার কোনো রাইট তাদের নেই। হয়তো পদ্মা সেতু থেকে তারা টাকা বন্ধ করছে, টাকা কিন্তু আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। এই টাকা কিন্তু অন্যান্য প্রজেক্টে ব্যবহার করতে পেরেছি। এটা কিন্তু করা যায়।’

এ বিষয়টি দেশের অনেকে জ্ঞানী-গুণীজনরাও জানেন বলে আক্ষেপে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের অনেকে জানে না। আমি জানি না, কেন জানে না। আমাদের যারা অর্থনীতিবিদ, যারা কাজ করে তারা কেন এটা মাথায় রাখে না যে তারা কোনো দাতা না, তাদের কাছে ভিক্ষা নিই না। ব্যাংকের একটা অংশীদার হিসেবে আমরা লোন নিই। সুদসহ সেই লোন পরিশোধ করি।’

বাংলাদেশের নামে যে টাকা বরাদ্দ হবে, সেই টাকা দিতে বিশ্বব্যাংক বাধ্য বলেও দাবি করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, ‘একটা প্রজেক্টে টাকা বন্ধ হয়ে গেলে সেই টাকা নিয়ে চলে যাবে, সেটা কিন্তু যেতে পারে না। আমাদের জ্ঞানীগুণীরাও মনে করছে বিশ্বব্যাংকের টাকা বন্ধ হয়ে গেছে… কীসের জন্য? আমরা তো লোন নিচ্ছি। যে লোন বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে সেটা কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশকে দিতে হবে। এটা না দিয়ে পারে না।’

বিশ্বব্যাংককে দাতা সংস্থা বলতেও নারাজ টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দাতা দাতা কথাটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কীসের দাতা, তারা তো উন্নয়ন সহযোগী। লোন নিই, সুদসহ পরিশোধ করি। সুদের হার কম, এটা ঠিক।’

দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধুকন্যাদেশের মানুষের সাহসের কারণেই পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী। আর তাই দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। শুধু ধন্যবাদ নয়, আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। কারণ যেদিন আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব, অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মানুষের শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি।

‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়া আমি পেয়েছিলাম, এটাই কিন্তু আমার সাহস এবং শক্তি। সেটুকু আপনাদের জানিয়ে রাখি। তাই দেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের সহযোগিতার, তাদের সাহসে, এই জনমানুষের সাহসে আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

উৎসবে শামিল হোন সবাই২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সাহসে সাহসী হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সে জন্য বলব, উৎসব সবাই করবেন।’

উৎসবে বিশৃঙ্খলা যাতে তৈরি না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকে একটু ধৈর্য ধারণ করবেন, নিয়ম মানবেন। কোনো রকম যেন দুর্ঘটনা না ঘটে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন। সবাই যার যার জায়গা থেকে যেভাবে হোক এই উৎসবে শামিল হবেন। এটা আমাদের মর্যাদার বিষয় যে আমরাও পারি। এটাই আমরা প্রমাণ করেছি।’

চাপের মুখে নতি স্বীকার করে না বাংলাদেশমানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো চাপের মুখে কখনও নতি স্বীকার করেনি, করবেও না। আর মানবাধিকার আমাদের শেখাতে আসবে কারা? যারা খুনিদের আশ্রয় দেয়? যে দেশে প্রতিনিয়ত স্কুলে গুলি হয়, ছাত্রছাত্রী মারা যায়, রাস্তাঘাটে পুলিশ গলা পাড়িয়ে মেরে ফেলে, তো তারা আমাদের কী মানবাধিকার শেখাবে?’

তিনি বলেন, ‘এগুলো কথা তারা ওঠাবে আর আমাদের কিছু লোক নাচবে, এটাই। আমাদের যে আত্মবিশ্বাস আছে, আমরা সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলব। জনগণের শক্তি নিয়ে চলব।’

এ বিভাগের আরো খবর