গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বেলেডাঙ্গা গ্রামে চোর সন্দেহে ননী বিশ্বাস নামে এক ভ্যানচালককে গাছে বেঁধে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
৪২ বছর বয়সী ননী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের মহারাজ বিশ্বাসের ছেলে।
স্বামীকে হত্যার অভিযোগে টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের স্ত্রী রেভা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার স্বামী ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। আমার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ২ ছেলে ছোট। তাদের নিয়ে আমি এখন অথৈ সাগরে পড়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির। এলাকার সবাই তাকে ভাল মানুষ হিসেবেই জানতো।’
রেভা জানান, গত ১১ জুন ননী বিশ্বাস তার ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের আত্মীয় দুলাল বাড়ৈর বাড়িতে বেড়াতে যান। পরের দিন ১২ জুন গ্রামের বাড়িতে তার জরুরি কাজ ছিল। এ জন্য ভোর ৪টার দিকে হিরণ গ্রাম থেকে রওনা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
পথে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বেলেডাঙ্গা পৌঁছালে স্থানীয় রবিন বালা, সান্তনু বালা, বিপিন বালা, দিকজয় মজুমদারসহ ২০/২৫ জন ননীর গতি রোধ করে। তারা তাকে ভ্যান চোর আখ্যা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে এবং কিল-ঘুষি সহ লাঠি ও রড দিয়ে পেটায়। পরে মৃত ভেবে তাকে সেখানেই ফেলে রেখে যায়।
পরে স্থানীয় পলাশ মজুমদার ননীর পকেট থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে তার বাড়িতে ফোন দেন।
রেভা বলেন, ‘আমরা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে আসেন। ১৪ জুন ভোর ৪টার দিকে তিনি মারা যান।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চৌধূরী টুটুল বলেন, ‘আমি ননীকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। সে খুবই সরল মানুষ ছিল। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাত। তার স্ত্রী রেভা ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীতে খন্ডকালীণ শ্রমিকের কাজ করে। ননী চোর নয়। আমি তাকে ভাল মানুষ হিসেবেই জানি।’
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বিশ্বাস বলেন, ‘শুনেছি বেলেডাঙ্গা গ্রামে চোর সন্দেহে এক ভ্যানচালককে মারপিট করেছে। ওই ভ্যান চালকের নাকি মাথায় সমস্যা ছিল। তাই তাকে স্থানীয়রা চোর হিসেবে সন্দেহ করে। মারপিটের কয়েকদিনের মধ্যেই সে নাকি মারা গেছে।’
টুঙ্গিপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তন্ময় মন্ডল বলেন, ‘শুধু সন্দেহের করণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ১৪ জুন নিহতের স্ত্রী রেভা বিশ্বাস বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।’