বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্যায় বড় মাথাব্যথা ‘মোবাইল চার্জ’

  •    
  • ২২ জুন, ২০২২ ০০:০৫

সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় এমন বন্যা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০০৪ সালে। কিন্তু সেবার সব মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। তাই এই ফোন চার্জ করার বাড়তি ঝামেলাও ছিল না তাদের।

অতীতের বড় বড় বন্যার দিনগুলোতে নিজেদের জানমাল রক্ষায়ই ব্যস্ত ছিল মানুষ। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বন্যার পানি সব যখন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখনও নিভু নিভু কিংবা বন্ধ মোবাইল নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মোবাইল ফোন চার্জ করতে অনেকে নৌকা নিয়ে ছুটে গেছেন বাজার থেকে বাজারে, দাঁড়িয়েছেন মানুষের দীর্ঘ লাইনে, প্রতি ঘণ্টা চার্জের বিনিময়ে অর্থও খরচ করেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নেত্রকোণার বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সচরাচর দেখা মিলছে না বিদ্যুতের। মোবাইল ফোন ও টর্চ লাইট চার্জ করতে স্থানীয়ভাবে চালু করা কিছু জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে লোকজনকে। লম্বা লাইনে অপেক্ষমাণ থেকে ২০-৩০ টাকার বিনিময়ে ব্যাটারির আংশিক চার্জ করছেন তারা।

কোনো কোনো জেনারেটর মালিক অল্প খরচে দুর্গত মানুষকে এই সেবা দিলেও কেউ কেউ কামিয়ে নিচ্ছেন বাড়তি টাকা।

হাওর দ্বীপ বলে খ্যাত খালিয়াজুরী সদরের পুরানহাটি গ্রামের শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আমাদের এখানে হঠাৎ বিদ্যুৎ আসে। আবার চলেও যায়। এ কারণে বেশির ভাগ মানুষ জেনারেটরের সাহায্যে মোবাইল ফোন ও চার্জ লাইটের চার্জ করছেন।’

শফিক জানান, খালিয়াজুরী সদরে ৩ জন ডিজেলচালিত জেনারেটর সেবা চালু করেছেন। তারা হলেন কুড়িহাটির আল মামুন, উপজেলা পরিষদ এলাকার মোস্তফা ও গছিখাইয়ের রায়হান। তারা প্রতি মোবাইল ও চার্জ লাইটের চার্জ বাবদ ১৫-২০ টাকা করে নিচ্ছেন।

এর বাইরে দুর্গম গ্রামগুলোতে ২০-৩০ টাকা করেও চার্জ ফি আদায় করছেন জেনারেটর মালিকরা।

খালিয়াজুরীর মুসলিমপাড়া গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘দুর্যোগে মোবাইল ফোনের প্রয়োজন অনেক বেশি। এর মধ্য দিয়ে একজন আরেকজনের খোঁজখবর নিতে পারেন। কেউ বিপদে পড়লে সহযোগিতা চাইতে পারেন। তাই প্রত্যেকে কিছু টাকা খরচ করে হলেও মোবাইল ফোনটি চার্জ করে চালু রাখছেন।’

তিনি জানান, বন্যার কারণে হাটবাজারে গিয়ে কেরোসিন বা মোমবাতি কিনতে পারছে না মানুষ। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরবাড়িতে ভূতুড়ে পরিবেশ নেমে আসে। সাপের ভয়ও আছে। এ কারণে চার্জ লাইটের প্রয়োজনও বেশি। তাই জেনারেটরের সাহায্যে চার্জ লাইটও চার্জ করে নিচ্ছেন দুর্গতরা।

আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা এটিকে এক ধরনের সেবা হিসেবেই মনে করছি। যারা জেনারেটর চালু রেখেছেন, তাদেরও ডিজেল বাবদ টাকা খরচ হচ্ছে। তাই কিছু টাকা তো নেবেই।’

এদিকে সুনামগঞ্জের কিছু এলাকায় অনেকের আত্মীয়-স্বজন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এসব এলাকা। ছিল না মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও।

সোমবার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও সব জায়গায় এখনও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

এ অবস্থায় অনেকেই ঘণ্টা হিসেবে বেশি টাকা দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে মোবাইল ফোন চার্জ দিয়ে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।

আবার যেসব এলাকায় বিদুৎ এসেছে ওই এলাকাগুলোতেও মোবাইল চার্জ দেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন লোকজন। মোবাইল চার্জ দিতে পেরে অনেকেই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন।

শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা আবজাল মিয়া বলেন, ‘আমি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। নেটওয়ার্ক নাই। ফোনে চার্জও নাই। শুনেছি শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় বিদ্যুৎ আসছে ওখানে যদি সুযোগ পাই তাহলে চার্জ দেব।’

এদিকে পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় ফোন চার্জ দিতে শত শত মানুষ ভিড় দেখা গেছে। যেকোনো উপায়ে চার্জ দিতে মরিয়া তারা। মাল্টি প্লাগের পয়েন্ট একটিও খালি নেই চার্জারের ভিড়ে।

সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরের বাসিন্দা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী মাহমুদুর রহমান তারেক ফোনে জানান, দেশে কারো সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছেন। আশপাশের কারো ফোনেও কল ঢুকছে না।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই-বোন সবাই দেশে আছেন। কিভাবে যোগাযোগ করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’

লন্ডন থেকে আরেক প্রবাসী ফয়সাল আহমদ বলেন, ‘আমি অনেক স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না। সিলেটে দুয়েকজন পেয়েছি, তাও নেটওয়ার্ক অনেক ঝামেলা করছে। স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে অনেক শান্তি পেতাম।’

এ বিভাগের আরো খবর