সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম ও নীলফামারিতে বন্যায় এক লাখ হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। অবশ্য সামগ্রিক বিবেচনায় এটি তেমন ক্ষতি নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা জানান।
অবশ্য কৃষিমন্ত্রী দাবি করেন সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ধানের উৎপাদনে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। যদি বন্যা আবারও আসে তবে ধানের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েক দিন আগে চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় তিন-চার দিনে প্রায় ২২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটা ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এলাকায় অস্বাভাবিক পানি ঢুকেছে। তবে একটা বিষয় ভালো ছিল, এই মুহূর্তে তেমন কোনো ফসল মাঠে ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে প্রচুর জমি পতিত থাকত; মানুষ চাষাবাদে তেমন একটা আগ্রহী ছিল না। আমরা সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছি এই জমিগুলোতে চাষাবাদ করার এবং এতে আউশ ধান করা যায় কি না, সে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমরা দেখছি বন্যায় সিলেটের ২২ হাজার হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমির আউশের ক্ষতি হয়েছে। আজ আমরা খবর পাচ্ছি কুড়িগ্রাম, নীলফামারী এই এলাকায় যে পানি আসছে তাতে ৫৬ হাজার একর জমির ক্ষতি হয়েছে। মানে আউশ ধান আক্রান্ত হয়েছে। যদিও আউশ উঁচু জমিতে হয়। বন্যা যদি আর না বাড়ে, এখন যে অবস্থায় আছে তাতে আর ক্ষতি হবে না।’
ধান উৎপাদনে প্রভাব না পড়লেও শাকসবজি উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫-৬ হাজার হেক্টরে। এ সময় গ্রীষ্মকালীন সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। তিল ও বাদাম চর এলাকায় ছিল, সেটারও ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আউশ ও শাকসবজির।’
দেশের সবচেয়ে বড় ফসল রোপা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান কৃষিমন্ত্রী। বলেন, ‘এখন রোপার বীজতলা তৈরির সময়। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফসল। এটা কিন্তু বন্যার ওপর নির্ভর করে। এখনও বীজতলা সেভাবে করে নাই, কেবল শুরু করেছে। আর যদি বৃষ্টি না হয়, আর বন্যা যদি না বাড়ে তাহলে ভালো। তবে অনেক সময় দেখা যায় আবার বন্যা আসে, এতে বীজতলা নষ্ট হয়। তখন আমরা আবার করি, পুনর্বাসন কর্মসূচিতে যাই।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কত ক্ষতি হচ্ছে বা হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল নির্দেশ দিয়েছেন, আমনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখতে। বীজতলা যদি নষ্ট হয় তাহলে আমরা যে এক্সট্রা কিছু বীজ রাখি ঘরে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আবার বীজতলা তৈরি করে মানুষকে দেয়া। সে প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আরেকটি হলো একেবারেই যদি ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে লেট ভ্যারাইটি…।
‘আমন হলো ফটোসেনসিটিভ। দিন ছোট হলেই এতে ফুল চলে আসে। যে ধানগুলো সাধারণত আমনে করা হয় সেটা করলে ফুল আসবে, আর উৎপাদন কম হবে। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীরা জাত উদ্ভাবন করেছেন যেগুলো লেস ফটোসেনসিটিভ। এগুলো বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যে পরিস্থিতিই আসুক, যদি আমন নষ্ট হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে রবি ফসল আমাদের বাড়াতে হবে। শাকসবজি, আলু, তেলের বীজ ও সার আমরা বিনা মূল্যে চাষিদের দেব। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এখন পর্যন্ত যা ক্ষতি হয়েছে সেটা কিছু না। যেহেতু ফসলই নেই। এখন আমনটা কেমন হয় দেখা যাক। তবে শাকসবজির ওপরে প্রভাব পড়বে।’