রাজধানী কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সরকারের নির্দেশ মেনে রাত ৮টার মধ্যেই অধিকাংশ শপিং মল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটেছে।
শান্তিনগর-বেইলিরোডে টুইন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, বেইলি স্টার শপিং সেন্টারসহ বেশ কিছু শপিং মল রয়েছে। রাত ঠিক ৮টায় এই সবগুলোই বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় মার্কেটগুলোর সামনে ক্রেতাদের ভিড়ও দেখা যায়নি।
বেইলিরোডকে অনেকেই চেনেন ঐতিহ্যবাহি সব শাড়ির দোকানের জন্য। সোমবার রাত ৮টার পর এখানকার প্রায় সব শাড়ির দোকানের শাটার বন্ধ থাকলেও দুয়েকটি দোকানে তখনও আলো জ্বলছিল। নবরূপা নামের একটি দোকানে রাত সাড়ে ৮টার পরও শাড়ি কিনছিলেন কয়েকজন।
নিয়ম ভেঙ্গে দোকান খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানের এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা বন্ধ করেই দিচ্ছিলাম। এর মধ্যেই কয়েকজন কাস্টমার এসেছেন। তাদের তো ফিরিয়ে দেয়া যায় না। উনারা কেনাকাটা শেষ করলেই আমরা বন্ধ করে দেব।’
দোকানে উপস্থিত শীলা নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমার খেয়াল ছিল না যে আজ থেকে ৮টায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। পারিবারিক আয়োজনের জন্য শাড়ি কিনতে এসে দেখি সব দোকান বন্ধ। এই দোকান খোলা পেয়ে এটাতে ঢুকলাম।’
নবরূপা দোকানটি থেকে বের হতেই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আশপাশের অন্যান্য শাড়ির দোকানের মালিক কর্মচারীরা এগিয়ে এসে নিজেদের হতাশার কথা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান মালিক বলেন, ‘সরকার নিয়ম করেছে, আমরা তা মানতে বাধ্য। তবে এটা আমাদের উপর জুলুম করা হল। কারণ আমরা করোনার কারণে দীর্ঘদিন ব্যবসা করতে পারিনি। এখন আস্তে আস্তে ক্ষতি পুষিয়ে নেবার চেষ্টা করছি। আর কদিন পরই কোরবানির ঈদ। এর মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের গলা টিপে মেরে ফেলার মতো।’
এ সময় পাশে থাকা আরেক ব্যবসায়ী খোলা থাকা খাবারের দোকানের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘চোখের সামনেই দেখেন- কেমন অসম আচরণ করছে সরকার। কাপড়ের দোকান বন্ধ থাকবে আর খাবারের দোকান, পারফিউমের দোকান খোলা থাকবে। বন্ধ থাকলে- সবই বন্ধ থাকবে। কেউ ব্যবসা করবে আবার কাউকে জোর করে দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে তা তো হয় না।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পায়ে হেঁটে বেইলি রোড পার হবার সময় শুধু খাবার ও প্রসাধনীর দোকানগুলোই খোলা দেখা গেল। ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে বই ও স্টেশনারীর দোকানগুলো।
দোকান বন্ধ করে শান্তিনগরের সবুজ লাইব্রেরীর কর্ণাধার বলেন, ‘সরকার নিয়ম করেছে আমাদের তা মানতে হবে। তবে এই সময়টিতে আমাদের বিক্রির ভাল চাপ থাকে। অফিস থেকে যাবার পথে বাচ্চাদের টুকটাক জিনিস কিনে নিয়ে যান গার্ডিয়ানরা।’
এরই মাঝে একজন ক্রেতা এসে হাজির হন লাইব্রেরির সামনে। নিজামউদ্দিন নামে বেসরকারি ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনেই ছিল না আজ থেকে ৮টার পর দোকান বন্ধ। অফিস থেকে বাসায় ফিরতে প্রতিদিনই ৮টার বেশি বেজে যায়। প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য এটাই আমার কাছে উত্তম সময়। কারণ সকালে অফিসের তাড়া থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এমন যানজটের শহরে অনেক কিছুই ঘড়ির কাঁটা ধরে করা সম্ভব হয় না।’
শান্তিনগরে অন্য সব শপিং মল ও পোশাকের দোকান বন্ধ হয়ে গেলেও কিছুটা কৌশলী হয়ে ইজি নামে একটি শোরুম খোলা দেখা গেল রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত। কোনো ক্রেতা না থাকলেও তাদের কয়েকজন বিক্রয় প্রতিনিধিকে দেখা গেল দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে, আর আশপাশে নজর রাখতে।
দোকান খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। ক্যাশ মিলিয়ে দোকানের শাটার নামানো হবে।’
এদিকে, শান্তিনগর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাছ-মাংস সহ অধিকাংশ দোকান বন্ধ। তবে মূল বাজারের বাইরে সবজি ও ফলের দোকানে বিক্রি চলে নিয়ম ভেঙ্গেই। রাত সাড়ে ৯টায়ও বাজারের অনেক দোকানে বিক্রি চলছিল।