এরইমধ্যে যারা এলসি খুলেছে কেবল তারাই ভারত থেকে গম আনতে পারবে। তবে সরকারি পর্যায়ে জি-টু-জি মাধ্যমে গম আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দেশটিতে বাণিজ্য বাড়াতে তাদের অ্যান্টি-ডাম্পিং তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে সপ্তম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক শেষে সোমবার রাতে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘আমরা আমাদের পানি বণ্টন ও বন্যা মোকাবেলার বিষয় তুলে ধরেছি। পানির ঢলের তথ্য বিনিময়ের কথা বলেছি। যাওয়ার আগে একাধিক মিটিং হয়েছে। নতুন-পুরনো সব ইস্যুতেই আলোচনা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে জোর দিয়েছি। তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘উভয় দেশের বাণিজ্য বেড়েছে। যদিও উভয় দেশের এ সংক্রান্ত তথ্যে গরমিল রয়েছে। আমরা বলি ১৬ বিলিয়ন, ওরা বলে ১৮। আমরা দুই বিলিয়ন বিক্রি-বাট্টা করি। ওরা ১৪ বিলিয়ন। আমরা বলেছি, তোমাদের এখানে (ভারত) আমাদের বাণিজ্য আরো বাড়াতে হবে। বলেছি অ্যান্টি-ডাম্পিং তুলে নিতে হবে। অ্যাসিটিক অ্যাসিড, জুট, ফ্লোটিং গ্লাসে তারা অ্যান্টি-ডাম্পিং করে।’
তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে গম আনতে যারা ইতোমধ্যে এলসি খুলেছে কেবল তারাই গম আনতে পারবে। কারণ গমের দাম বাড়ার ফলে অনেকেই ভুয়া এলসি খুলে বসে আছে। এগুলোও তারা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছে। তাছাড়া জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় গম আনার প্রস্তাব করেছি আমরা। এটাও তারা ভেবে দেখবে।
‘তাদের গমের অভাব নেই। তাদের (ভারত) শত শত ট্রাক আমাদের সীমান্তে এসে পড়ে থাকে। এ নিয়ে তারা (ভারত) প্রশ্ন তুলেছে। আমরা এটা সমাধানে নজর দেয়ার কথা বলেছি।’
ভারত সফরে দেশটির যার সঙ্গেই সাক্ষাৎ হয়েছে সবাই প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের তারিখ মোটামুটি নির্ধারণ করেছি। বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সম্মতির ওপর নির্ভর করছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনায় সীমান্ত হত্যার বিষয় তুলে ধরেছি। গত কয়েক সপ্তাহে সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটেনি। আগামীতেও যেন না ঘটে সে বিষয়ে বলেছি। এসব বিষয়ে তারা ভালোভাবেই রেসপন্স করেছে।
‘করোনা-পরবর্তী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছি।’
এছাড়া নিরাপত্তা ও জ্বালানি নিয়ে আলাপ হয়েছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের বিশেষ উদ্যোগ চাই। তাদেরকে বলেছি, মিয়ানমার আমাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তোমরা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়েরই বন্ধু। তাই তোমাদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এটা শেষ না হলে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। এটা তোমাদের জন্যও ক্ষতি। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ক্ষতি। তারা চেষ্টা করছে। তারা ওখানে (মিয়ানমার) কিছু বাড়িঘরও করেছে।’
‘হাওরে আবাসিক এলাকা, পানি যাবে কোথায়’
‘বন্যা আমাদের দেশে সব সময়ই হয়। আমাদেরকে সব সময়ই পানি নিয়ে থাকতে হবে। বন্যা কখনো বন্ধ করতে পারবেন না। তবে বন্যার ক্ষতি যাতে কমানো যায় সেই চেষ্টা…। সেজন্য আমরা তাদেরকে (ভারত) সাজেশন দিয়েছি- আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম, শেয়ারিং ডেটা, শেয়ারিং ফোরকাস্ট।’
ভারত সফর শেষে সোমবার রাতে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘সিলেট এলাকায় এবারের বন্যার কারণ বৃষ্টি। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে তিন দিনে ২৫০০ মিলিমিটির বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এই বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে একসঙ্গে নেমে এসেছে। বলা হচ্ছে ৭০-৮০ বছরে এতো বড় বন্যা হয়নি। আমি সিলেটের ছেলে। সারাজীবন বন্যা দেখেছি। আগে বহু বড় বড় জলাশায়, পুকুর-দীঘি ও খাল ছিল। সেগুলো আমরা ভরে ফেলেছি। হাওরের মধ্যে আবাসিক এলাকা বানিয়ে ফেলেছি। এখন পানি যাবে কোথায়?
‘কুশিয়ারা ও সুরমা নদীতে ৫০ বছরেও ড্রেজিং হয়নি। অনেক প্ল্যান হলেও বাস্তবায়ন হয় না। পণ্ডিতরা বলেন যে নদীর গভীরতা ১০ মিটার পর্যন্ত কমে গেছে।’