উচ্চ আদালতের আদেশ না মেনে আসামিকে কারাগারে পাঠানোয় জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনুকে ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ওই আসামি জামিনে ছিলেন।
হাইকোর্টের তলবে সোমবার হাজির হয়ে বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনু ‘অসতর্কতাবশত’ ও ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ উল্লেখ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। পরে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ভুলের দায় থেকে অব্যাহতি দিলেও এর জন্য তাকে ভর্ৎসনা করে।
সংশ্লিষ্ট জেলা ও দায়রা জজকে উদ্দেশ করে হাইকোর্টের এই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘আমরা প্রায়শ লক্ষ করছি যে অধস্তন আদালতের অনেক বিচারক হাইকোর্টের আদেশ ঠিকভাবে না পড়েই আদেশ দিচ্ছেন। যদি উচ্চ আদালতের আদেশ বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে জেলা জজশিপের সিনিয়র জজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটাও আপনারা করেন না।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এমন করলে (হাইকোর্টের দেয়া জামিন পাশ কাটিয়ে আসামিকে কারাগারে পাঠানো) বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের কী ধারণা তৈরি হবে? এরপর আবার আদেশ রিকল না করে তাকে জামিন দেয়ায় আপনি ভুলের ওপর ভুল করেছেন।
‘আপনার ভুলের কারণে একজন ব্যক্তিকে অতিরিক্ত ২৩ দিন জেল খাটতে হয়েছে। এখন চলেন, আপনিসহ আমরা (হাইকোর্টের দুই বিচারক) তিনজন গিয়ে জেল খেটে আসি।’
পরে বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনু বলেন, ‘ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ভুল হবে না। নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। এরপর হাইকোর্ট তার ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে জামিন না-মঞ্জুরের আদেশটি রিকল (প্রত্যাহার) করার নির্দেশ দেয়।
৫০ ডলারের ৩০টি জালনোট পাওয়ায় বকশীগঞ্জ থানার কুতুবের চর গ্রামের মো. জাকিরুলের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জামালপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন জাকিরুল। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১০ এপ্রিল হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়ে রুল জারি করে।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. সারোয়ার আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম।
পরে আইনজীবী মো. সারোয়ার আলম চৌধুরী বলেন, ‘রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জাকিরুলকে জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর ১৯ এপ্রিল জামালপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে জামিননামা (বেইল বন্ড) দাখিল করে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন জাকিরুল।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ মে মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন হাইকোর্টের জামিন প্রাপ্তির আদেশ যুক্ত করে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন নিয়মিতকরণের আবেদন করেন জাকিরুল। উচ্চ আদালতের জামিনে থাকলে নিয়ম অনুযায়ী বিচারিক আদালতে আবেদন করে জামিন নিয়মিত করতে হয়। সে অনুযায়ী জাকিরুল জামিন চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক তার জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
‘এ ঘটনা জানার পর আমরা ৬ জুন হাইকোর্টের নজরে আনি। হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে ওইদিন বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনুকে তলব করে আদেশ দেন এবং ২০ জুন তাকে হাজির হতে বলা হয়। তলবের আদেশ পেয়ে গত ১৫ জুন জাকিরুলকে জামিন দেন ওই বিচারক।’