বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গফুরের দুর্দিনে ঘাস নেই মহেশেরও

  •    
  • ২০ জুন, ২০২২ ২০:০৫

কৃষক আর তাদের গবাদিপশুর সম্পর্ক বেশ নিবিড়। কৃষকের দিন খারাপ গেলে এর প্রভাব পড়ে তাদের গৃহপালিত পশু-পাখির ওপরও। এবারের বন্যায় এমন চিত্র দেখা গেছে নেত্রকোণা জেলার পথে-প্রান্তরে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী গল্প ‘মহেশ’। গল্পটিতে মহেশ ছিল মূলত সহায়সম্বলহীন কৃষক গফুরের পুত্রসম একটি গরু। আগের বছরের বন্যা, পরের বছরের খরা আর জমিদারি শোষণসহ নানা কারণে গফুর আর তার মেয়ে আমিনার যখন দুর্দিন চলছিল, তখন এক মুঠো ঘাসের অভাবে কঙ্কালসার হয় তাদের মহেশও।

শরতের সেই গল্প অবলম্বনেই ভূপেন হাজারিকা গেয়েছিলেন তার অমর গান- ‘…এক মুঠো ঘাস পায় না মহেশ, দুঃখ ঘুচে না’।

চলমান বন্যার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন হাজারও মহেশের সন্ধান মিলছে নেত্রকোণার হাওর জনপদে। গল্পের মতো এখানকার মহেশদেরও চলছে সীমাহীন দুর্দিন। বেঁচে থাকার জন্য এক মুঠো ঘাসও পাচ্ছে না তারা। এমনকি একটু উঁচু আশ্রয়ও মিলছে না তাদের। কষ্টে আছেন মহেশদের মালিকরাও।

হাওরাঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। আর কৃষিকাজে গবাদিপশুর ব্যবহার অপরিহার্য। তাই হাওরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে একাধিক গরু। কিন্তু চলমান বন্যায় বেশির ভাগ কৃষকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। ডুবে গেছে অথবা নষ্ট হয়ে গেছে হাজার হাজার খড়ের গাদা আর গোচারণ ভূমি। এ কারণে গবাদিপশুর খাবার ও আশ্রয়ের স্থান নিয়ে ঘোর বিপাকে পড়েছে বন্যাদুর্গত কৃষক পরিবারগুলো।

খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ ও কলমাকান্দার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে- অনেকেই তাদের গবাদিপশু পানির মধ্যেই রেখেছেন। অথবা নৌকায় পরিবহন করে উঁচু কোনো জায়গায় নিয়ে গাদাগাদি করে রাখছেন। গোচারণ ভূমি ও খড়ের গাদা ডুবে যাওয়ায় কচুরিপানা বা গাছের লতাপাতা দিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের নিচতলায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সার বেঁধে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে শতাধিক গরু ও ছাগল। একই দৃশ্য দেখা গেছে খালিয়াজুরীর সিদ্দিকুর রহমান পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় গিয়েও। তবে বেশির ভাগ গবাদিপশুর সমানে কোনো খাবার দেখা যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গবাদিপশু হচ্ছে কৃষকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান সম্পদ। তাই নিচতলাটি গবাদিপশুর জন্য ছেড়ে দিয়েছি।’

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে আশ্রিত কিছু গরু

একই উপজেলার খলাপাড়া গ্রামের কৃষক প্রহলাদ সরকার বলেন, ‘আমার চারটি গরুর সারা বছরের খাবারের জন্য উঠানে একটি খড়ের পুঞ্জি বানিয়ে রেখেছিলাম। বন্যায় এর অর্ধেকটা ডুবে গেছে। আবার টানা বৃষ্টির কারণে পুঞ্জির উপরিভাগের খড়ও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো এখন আর গরু খায় না। নিরুপায় হয়ে কিছু কচুরিপানা আর গাছের লতাপাতা এনে খাওয়াচ্ছি। এসব খেয়ে গরুগুলো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন অবস্থা চললে গরুগুলো বেচা ছাড়া আর উপায় নেই।’

খালিয়াজুরী সদর গ্রামের হারুন মিয়া বলেন, ‘আমার খামারে ২০টি গরু ছিল। খামার ডুবে যাওয়ায় সেগুলো ট্রলারে করে অন্যত্র পাঠিয়েছি। এখন খবর পাচ্ছি সেখানেও বন্যার পানি ঢুকছে।’

কলমাকান্দার বাউসারি এলাকার লতিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা গবাদিপশুকে সাধারণত প্রাকৃতিক ঘাস আর খড় কেটে খাওয়াই। এখন সমস্ত গোচারণ ভূমি ডুবে যাওয়ায় ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। আর খড়ের পুঞ্জিও নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ষা না গেলে আর ঘাস পাওয়া যাাবে না। এমন অবস্থায় গরু বেচা ছাড়া কোনো পথ দেখছি না।’

তিনি জানান, এখন বেচে দিলে অনেক সস্তায় বেচতে হবে। আবার আগামী চাষ মৌসুমের আগেই নতুন করে গরু কিনতে হবে। এতে তাদের প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৩০৮টি গরু, ৭২ হাজার ৪৪টি ছাগল ও ৭ হাজার ৮৩২টি ভেড়া বন্যাকবলিত হয়েছে। ২২৩টি গরুর খামারেও বন্যার পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৯৬৭টি গরু এবং ৭ হাজার ৪৯১টি ছাগল ও ভেড়াকে নিরাপদ উঁচু স্থানে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হয়েছে।

নিজের ছাগলটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বন্যাকবলিত এক যুবক

তিনি আরও জানান, বন্যায় ১ লাখ ৫০ হাজার একর চারণভূমি ডুবে গেছে, যেখানে প্রাকৃতিক ঘাস জন্মাত। ৫১০ মেট্রিক টন দানাদার খাদ্য এবং ১ হাজার ২০০ টন খড়ও নষ্ট হয়ে গেছে। এসব খাদ্যের আনুমানিক মূল্য দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে খুব দ্রুত পশুখাদ্য সরবরাহের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে বন্যার ধকলে গৃহপালিত অন্যান্য পশুপাখি, বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, শূকর, হাঁস-মুরগি প্রভৃতি প্রাণসিম্পদের অবস্থাও তথৈবচ।

এ বিভাগের আরো খবর