বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দক্ষতায় পদ্মা সেতু: চীনা দূত

  •    
  • ২০ জুন, ২০২২ ১৭:৩৪

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমং বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পটির শুরুতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। আমি একে ষড়যন্ত্র বলতে চাই না। আমি বলতে চাই, এটি আত্মবিশ্বাসের অভাব। বাংলাদেশ, সরকার ও দেশটির জনগণের প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি।’

দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোর মুখ ফিরিয়ে নেয়াকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলতে চান না ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তার মতে এটি ছিল বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন চীনা দূত। ঢাকায় চীনের দূত বলেন, ‘এমন সাহসী সিদ্ধান্ত অন্য কোনো দেশের কোনো নেতা নিতে পারতেন কি না আমার সন্দেহ আছে।’

ঢাকায় চীনা দূতাবাসে নিজ কার্যালয় প্রাঙ্গণে রোববার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন লি জিমিং।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রকল্পটির শুরুতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। আমি একে ষড়যন্ত্র বলতে চাই না। আমি বলতে চাই, এটি আত্মবিশ্বাসের অভাব। বাংলাদেশ, সরকার ও দেশটির জনগণের প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি।’

দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ নিয়ে ওই সময় যা ভেবে নিয়েছে, চীনের অবস্থান যে তার বিপরীত ছিল, সে কথাও স্পষ্ট করেছেন এই কূটনীতিক।

লি জিমিং বলেন, ‘কিন্তু চীন জানত বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো, দেশটির সুনাম রয়েছে। এমনটা কখনও হয়নি যে বাংলাদেশ সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে বা বিলম্ব করেছে।

‘ফলে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি চীনের পূর্ণ আত্মবিশ্বাস রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করতাম, নিজের টাকায় বাংলাদেশ এটি নির্মাণ করতে পারবে। বাংলাদেশ পারবেই। এবং আমরা সঠিক ছিলাম। তাই আমি ষড়যন্ত্র বলতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রশংসা ছিল লি জিমিংয়ের কণ্ঠে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণে স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। সব সন্দেহ, চাপ, দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগসহ নানা ধরনের সংকটের মুখেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা, সাহস, একাগ্রতা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার কারণে যেটি একসময় অসম্ভব মনে হচ্ছিল, সেটি এখন বাস্তবতা, যা চাইলেই এখন স্পর্শ করা যায়।’

বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে এখন আর কারও কোনো সন্দেহ নেই জানিয়ে বাংলাদেশে চীনের প্রতিনিধি বলেন, ‘আমার মতে, তিনি তার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এতে অবদান রেখেছেন। আমি আগেও বলেছি, এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে রাজনৈতিক সাহস, সদিচ্ছা ও একাগ্রতার প্রয়োজন। তার মতো এমন সাহসী সিদ্ধান্ত অন্য কোনো দেশের কোনো নেতা নিতে পারতেন কি না আমার সন্দেহ আছে। সত্যিই আমার সন্দেহ আছে।’

পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকের অসন্তুষ্টির কথা স্বীকার করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। তবে নাখোশ হওয়াকে ষড়যন্ত্র বলতে নারাজ তিনি।

লি জিমিং বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক সাফল্য, যা বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে। ফলে জনগণ অনেক খুশি। তবে সবাই খুশি নয়, যেমন চীনের জনগণের মতো (হাসতে হাসতে)। এটাকে যদি আপনারা ষড়যন্ত্র বলতে চান, বলতে পারেন। তবে আমি এই শব্দটি ব্যবহার করব না। আমি শুধু বলতে চাই, বাংলাদেশের এই সাফল্যে সবাই খুশি নয়।’

পদ্মা সেতু ট্রান্স-এশিয়া নেটওয়ার্ক ও এশিয়ান হাইওয়ে ঘাটতি পূরণ করবে বলেও মনে করেন ঢাকায় চীনের প্রতিনিধি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-চায়না-ভারত-মিয়ানমারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলতে চাই যে বাংলাদেশের সোনার বাংলায় উন্নীত হওয়ার যে সংকল্প, তা পূরণ হতে চলেছে। চীনাদেরও এমন স্বপ্ন রয়েছে, যা পূরণে আমরাও সচেষ্ট। আমরা একে অপরের স্বপ্ন পূরণে পারস্পরিক সহযোগী হতে চাই। চীন সব সময় বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু।’

পদ্মা সেতু নিয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিংয়ের আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন চীনা দূত।

তিনি বলেন, ‘চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং যতবার বাংলাদেশের কথা বলেন, ততবারই পদ্মা সেতুর কথা বলেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এই সেতুটি বাংলাদেশের মানুষের যে অনুভূতি, তা চীনের জনগণের চেয়ে ভালো কেউ অনুধাবন করতে পারবে না। সাহস, একাগ্রতা ও উন্নতি– এই শব্দগুলো দিয়ে আমরা আমাদের ইয়াংজি নদীর ওপর নির্মিত সেতুকে বর্ণনা করতাম।’

ঢাকায় চীনা দূতাবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন লি জিমিং। ছবি: নিউজবাংলা

ইয়াংজি নদীর ওপর নির্মিত সেতু নিয়ে একটি গল্প শোনান লি জিমিং। তিনি বলেন, ‘ওই সেতুটির নির্মাণযজ্ঞে উদ্বুদ্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মাও সে তুং কবিতা লিখেছিলেন। তার কবিতায় এমন একটি পঙ্‌ক্তি ছিল, যেখানে বলা হচ্ছে “এই সেতু উত্তর ও দক্ষিণের সংযোগ, যা সংযুক্ত করেছে বিচ্ছিন্ন জনপদকে।”’

পদ্মা সেতুর নির্মাণে দরপত্র অনুযায়ী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান যোগ্য ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে ফ্রান্সের একটি, সিঙ্গাপুরের একটি, সাউথ কোরিয়ার দুটি এবং চীনের একটি। তবে শেষ পর্যন্ত পাশে ছিল চীন। কারণ অন্যরা বিশ্বাস করত বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়া এত বড় অঙ্কের অর্থ জোগাড় করে সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়।

‘তাদের বাংলাদেশের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল না। একমাত্র চীনের মেজর ব্রিজ এগিয়ে এসেছে। তারা সেদিন এগিয়ে না আসলে হয়তো আমরা এই সময় সেতুটি উদ্বোধন করতে পারতাম না ‘

পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের ‘উন্নয়নের প্রতীক’ আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্ধেক মানে প্রায় আট কোটি লোক উপকৃত হবে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯-২১টি জেলার মানুষ উপকৃত হবে। বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.২৩ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত যোগ হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার চিন্তা করলে এই সংখ্যাটি অনেক বড়। সেই হিসাবে শুধু আট কোটি মানুষই নয়, পুরো দেশের মানুষ এই সেতুর উপকারভোগী হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর