চট্টগ্রামে শুক্রবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। নগরীর রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনের নিচতলাও।
জলাবদ্ধতার কারণে বিঘ্ন ঘটছে যানবাহন চলাচলে; সড়কে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে আগেই। রোববারের ভারী বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও এলাকা।
নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, চকবাজার, শান্তিবাগ, বাদুরতলা ও ওয়াপদার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
আমবাগান আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৮৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হৃদয় খান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই, আমার ছোট দোকান, চা বিক্রি করি। কিন্তু বৃষ্টি হলেই পানি জমে এখানে। আর পানি জমলেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। নয়তো গাড়ি চলাচল করায় পানির ঢেউ দোকানে ধাক্কা দেয়, জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। যতবার পানি ওঠে ততবারই লস।’
জলাবদ্ধতার কারণে জরুরি প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হতে পারছে না সাধারণ মানুষ। বের হলেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পদে পদে। জলাবদ্ধতার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইকা চৌধুরী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আমার পরীক্ষা ছিল। আমি পাঁচলাইশ থানার চালতাতলী এলাকায় থাকি, এখানে কোমর সমান পানি। এই পানি মাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারিনি বলে পরীক্ষা মিস গেছে।’
শহরে জলাবদ্ধতার কারণে কমে গেছে গণপরিবহনের সংখ্যা। এতে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া হাঁকছেন রিকশা ও ভ্যানচালকরা।
নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা জবা হোসাইন বলেন, ‘জরুরি কাজে পাহাড়তলী গিয়েছিলাম সকালে। কোনোভাবে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত গিয়ে আর গাড়ি পাইনি। ৫০ থেকে ৬০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা দিয়ে রিকশায় যেতে হয়েছে।’
এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে সড়ক ছেড়ে অধিকাংশ যানবাহনই চলছে ফ্লাইওভার দিয়ে। গাড়ির চাপে ফ্লাইওভারেও দেখা দিয়েছে যানজট।
রেজাউল করিম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির অজুহাতে সবাই অফিস না করলেও আমরা যারা অফিসে জ্যেষ্ঠ, আমাদের অফিস করতেই হয়। জিন্তু সকাল ৮টায় বের হয়ে বায়েজিদ থেকে জিইসি, তিন-চার কিলোমিটার পার হতেই দুই ঘণ্টা কেটে গেছে। নিচে পানি থাকায় তখন সব গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে চলছিল।’
কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার কারণে বাসা-বাড়ির নিচতলায়ও পানি জমেছে। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি নিউ এজের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি সরোয়ার কামাল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘মনকে এই বলে বুঝ দেই, চট্টগ্রামের মেয়রের বাসার নিচতলাও একহাঁটু পানিতে ডুবে আছে।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছর ধরে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ করছে তিনটি সরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হাতে। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামের এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি বড় প্রকল্প ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ও সিডিএর হাতে। দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। তারপরও বর্ষা মৌসুমে এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী।
এসব প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল পেতে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক লম্বা স্টোরি। তবে যেটা বলা যায়, তা হলো প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে তবেই এর সুফলতা পাওয়া যাবে।’
আমবাগান আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৮৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটা গত ২৪ ঘণ্টার হিসাব। সোমবার সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টির পরিমাণ ১ মিলিমিটার।’