‘বিভীষিকময় তিনটি রাত কেটেছে। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। থাকার মতো কোনো জায়গাও নেই। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আমরা সবাই খুব আতঙ্কে ছিলাম। জীবনে কখনও এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। এখন ফিরে এসে মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেয়েছি।’
এ কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নামিয়া আক্তার প্রাপ্তি।
রোববার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে কথা হয় প্রাপ্তির সঙ্গে।
সুনামগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়েছিলেন তিনিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থী। তিন দিন পর রোববার সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার করে সিলেট নিয়ে আসে। এরপর তারা ঢাকার পথে রওয়ানা হন।
প্রাপ্তি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২১ শিক্ষার্থী ১৫ জুন সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে এসেছিলাম। ওইখানে গিয়েই আমরা বন্যার কবলে পড়ি। অনেক কষ্টে সে রাতে সুনামগঞ্জে ফিরে আসি। কিন্তু শহরে এসে দেখি সবকিছু তলিয়ে গেছে। বাস চলাচলও করছে। এবং থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। হোটেলগুলো হয় তলিয়ে গেছে, নতুবা মানুষে ভর্তি।’
আবু সুফিয়ান অর্ণব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সে রাত ছিল খুবই বিভীষিকাময়। চারপাশে পানি ও অন্ধকার। মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা করছে, যান চলাচল বন্ধ ও থাকার মতো জায়গা নেই।
‘ওই রাতে আমরা একটি রেস্টুরেন্টের দোতলায় ছিলাম। বসেই কাটিয়েছি সারা রাত।’
পরদিন পুলিশ ও র্যাব তাদের উদ্ধার করে পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে নিয়ে আসে।
অর্ণব বলেন, ‘পরের রাত আমরা ওই হাসপাতালে কাটাই। তবে সেখানেও পানি উঠে যায়। এরপর শুক্রবার রাতে ছিলাম পুলিশ সুপারের দেয়া একটি ট্রলারে।’
সেই ট্রলারে করে সিলেট ফিরতে চাইছিলেন জানিয়ে অর্ণব বলেন, ‘ওই ট্রলারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মাঝপথে বিকল হয়ে যায়। এতে আমরা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আজ (রোববার) ভোরে আমাদের সেনাবাহিনী উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।’
শোয়াইব আহমদ নামের এই পর্যটকদলের আরেক ছাত্র বলেন, ‘জীবনের বিভীষিকাময় তিনটি রাত কাটিয়েছি। বেঁচে আসতে পারবো কি না এই নিয়েও দুশ্চিন্তায় ছিলাম। একেকটি মূহুর্ত গেছে যেন একেকটা দিন। সেনাবাহিনী, পুলিশ র্যাব সবার সহযোগিতায় আমরা ফিরতে পেরেছি। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অনেক সহযোগিতা করেছেন।
‘সুনামগঞ্জের মানুষজন আমাদের থেকেও বেশি কষ্টে আছেন। অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থীর সঙ্গে বরিশাল বিএম কলেজের ১০ শিক্ষার্থীও আটকা পড়েছিলেন সুনামগঞ্জে। রোববার তাদেরও উদ্ধার করে সিলেট নিয়ে আসে সেনাবাহিনী।
বিএম কলেজের ছাত্র আসিফ আহমদ বলেন, ‘ফিরে এসে এখন সবকিছু অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা বা উপন্যাসের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু ওইখানে যতক্ষণ ছিলাম, প্রতিটা মূহুর্ত ছিল ভয় ও শঙ্কার। নেটওয়ার্ক না থাকায় কী হচ্ছে তাও জানতে পারছিলাম না। বিদ্যুৎ না থাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।’
এই শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের পর রোববারই তাদের ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে সেনাবাহিনী। এর আগে দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে তাদের সঙ্গে দেখা করেন সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমি খুশি তোমাদের উদ্ধার করতে পেরে। আমি খুব টেনশনে ছিলাম। তোমাদের কীভাবে উদ্ধার করা যায় এ নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক কথা বলেছি।’