ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফরিদপুরে পদ্মার পানি বাড়ছে। জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এতে মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পানি বেড়ে নিম্ন অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে।
গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ লিডার সালমা খাতুন জানান, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি গত ২৪ ঘন্টায় ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার সীমায় প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-এক দিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে। পানি বাড়তে থাকলে পদ্মার ভাঙন তীব্র হওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
জেলা সদরের ডিক্রিরচর, চরমাধবদিয়া ও নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন এবং চরভদ্রাসন উপজেলার চার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার মাসুদ সরদার জানান, সাত-আট দিন ধরেই পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দুইদিন ধরে পদ্মার পানি হু হু করে বাড়ছে।
একই ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন ডাঙ্গী এলাকার হাজেরা খাতুন বলেন, ‘দুদিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাইড়্যা বাইস্যা অ্যয়ে যাচ্চে তাতে বয়্যে (ভয়ে) আছি। কি থ্যাইকা কি অ্যয়ে (হয়ে) যায়।’
ফরিদপুরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মুস্তাক বলেন, ‘দুদিন ধরে আমার ইউনিয়নে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুদিনে প্রায় ১ ফুট পানি বেড়েছে। এই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ এলাকায় বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
চরমাধবদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, ‘পদ্মার পানি হঠাৎ বাড়ায় ইউনিয়নের অধিকাংশ বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সব ফসল তলিয়ে যাবে। ইউনিয়নের কমপক্ষে সাতশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চরভদ্রাসন উপজেলার চার ইউনিয়নে তিন শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, জেলায় হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফরিদপুরে পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁর পানি বাড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণের মতো বন্যা এখনও হয়নি। তবে বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ফরিদপুরের নয় উপজেলার ইউএনওকে সাত টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৫০ টনের বেশি ত্রাণ মজুত আছে।’
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘এ অঞ্চলে বন্যায় আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি। তবুও বন্যা পূর্বাভাস ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।’