ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিশেষজ্ঞ বা টেকনিক্যাল পার্সন ছাড়াই ইভিএম যাচাইয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ১০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।
বৈঠক শেষে দলগুলোর জন্য ইভিএম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে আগ্রহ দেখা যায়নি কোনো দলের।
বৈঠক শেষে একটি দলের কয়েকজন প্রতিনিধি ইভিএমের পাশে দাঁড়ালেও তাদের কোনো বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না।
ইভিএম যাচাইয়ের জন্য প্রথম পর্বে ১৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে সাড়া দেয় ১০টি। রোরবার
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিকেল তিনটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। আগামী ২১ ও ২৮ জুন আরও ১৩টি করে দলটি দলকে এভাবে ইভিএম যাচাইয়ের সুযোগ দেবে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের দেয়া চিঠি পছন্দ না হওয়ার কথা জানিয়ে এতে অংশ নেয়নি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। অন্যদিকে 'ইভিএম যাচাই করতে এসে সময় নষ্ট করতে চায় না’ জানিয়ে আসেনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মত নিতে চায় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। সম্প্রতি কমিশনার মো. আলমগীর নিউজবাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তারা এক শ আসনে যন্ত্রটি ব্যবহারের চিন্তা করছেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সিইসি।
টেকনিক্যাল পার্সন ছাড়াই ইভিএম সংলাপে আসার প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই আসছি।’
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রতিনিধি রুহুল আমিন বলেন, ‘কোনো এক্সপার্ট নিয়ে আসি নাই। যারা একটু বেশি বোঝে তাদের নিয়ে আসছি। এছাড়া কোনো দলের প্রতিনিধি ইসির ইভিএম প্রদর্শন করে নাই। এ বিষয়ে ইসির কোনো কার্যত পদক্ষেপ ছিল না।’
বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, তিনি তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। সেই মেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়েন।
গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘না আমরা কোনো টেকনিক্যাল টিম আনি নাই। আমরাই আসছি।’
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন- এনডিএমের যুগ্ম মহাসচিব মোমিনুল আমীন বলেন, ‘আমরা আজকে আনি নাই। তবে পরে নিয়ে আসব।’ সভার শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে মতামত কারও উপর চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছা নেই।’
বৈঠকে অংশ নিয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটি হয়। এর কারণে ভোটে বিলম্বিত হয়। গোপন কক্ষে ক্ষমতাসীনরা প্রভাব বিস্তার করে জোর করে ভোট দিয়ে দেয় অথবা ক্যান্সেল করে।’
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) যুগ্ম মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ‘ইভিএমে হার্ডওয়্যারের বিষয়টি আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সফটওয়্যারের ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ না করতে পারলে সামান্য কিছু আসনে ইভিএমে ভোট করার প্রয়োজন নাই।’
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু আসনে ব্যালট, বাকি আসনে ইভিএমে ভোট বৈষম্য তৈরি করবে।’
ইভিএমে কারগরি ত্রুটি থাকতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন। তিনি বলন, ‘কিন্ত ইভিএমের ভোটের ফলাফল প্রকাশ নিয়ে কোন প্রশ্ন নাই।’
পৃথিবীর কোনো প্রযুক্তিই শতভাগ সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলন, “অনেকে উদাহারণ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশ ইভিএম ব্যবহার করে না। কিন্তু একটু তথ্যে ভুল আছে।’
অনুষ্ঠানে না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। এই বিষয়টা ঠিক না করে ইভিএম নিয়ে আলাপ করে লাভ নাই। এর ফলে আমাদের সময় নষ্ট এবং নির্বাচন কমিশনের সময় নষ্ট।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, তাদের কাছে মনে হয়েছে কমিশনের চিঠি হয় নাই।
‘আমাদের সম্মানহানি হয়েছে। ওনাদের সঙ্গে আমরা পরিচিতই হতে পারলাম না, তারা আমাদের ইভিএম যাচাইয়ের প্রস্তাব দিল। এটা কোনো কথা হলো?’-বলেন তিনি।