কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার ভোর থেকে শুরু করে রোববার সকাল পর্যন্ত যমুনা নদীতে তীব্র ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে মুহূর্তের মধ্যে শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
তারা আরও জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার নদ-নদীসহ নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ করে চৌহালী উপজেলাধীন খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, কৈজুরী এলাকায় যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙন শুরু হয়। এতে শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে বহু বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় আব্দুর মতিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা হোক। এখনই ভাঙন বন্ধ না হলে বিলীন হয়ে যাবে বিশাল এলাকা।’
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ভাঙন এলাকা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধের কাজ দ্রুত করা হোক। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আতঙ্কের কিছু নেই।’
শনিবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার সিরাজগঞ্জের নদীভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রস্তুত আছে।
‘এ বছর অতিবৃষ্টিপাতে আগাম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটসহ অনেকগুলো জেলা শহরে পানি ঢুকে গেছে। মানুষ চরম কষ্টে আছে। এ ছাড়া যমুনা ও পদ্মাতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে নদী ভাঙন চলছে। সবকিছু মিলে এবার মনে হচ্ছে একটা শক্ত বন্যা মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।’
কবির বিন আনোয়ার আরও বলেন, ‘এনায়েতপুরে যমুনার ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে। তবে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্রাহ্মণগ্রামসহ দুই এক জায়গায় কিছুটা ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে কাজ চলছে।’
ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, বগুড়া পওর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক শাহজাহান সিরাজ, সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি কাজীপুর পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ শহরের হার্ডপয়েন্ট ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রোববার সকালে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি, বড়ালসহ অন্যান্য নদী ও খাল-বিলের পানি বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে যমুনার চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হতে শুরু করেছে। তলিয়ে যাচ্ছে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলও।
পানি বাড়ার কারণে জেলা সদরের বিয়ারাখাট এলাকায় পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে গেছে। অন্যদিকে শাহজাদপুর উপজেলায় রাউতারা রিং বাঁধ ভেঙে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনায় পানি দ্রুত বাড়ছে। ২২ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও আতঙ্কের কারণ নেই। স্বাভাবিক প্লাবন হলেও বন্যা বা আশঙ্কাজনক অবস্থা সৃষ্টির শঙ্কা কম।’