কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে ‘গো হোম’ বা ‘বাড়ি চলো’ প্রচার শুরু করেছেন রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার কুতুপালং-বালুখালীসহ অন্তত ৮টি স্থানে রোববার সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তারা। এর আগে আশ্রয় শিবিরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্যাম্পের অলিগলি ও শরণার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা প্রচার চালান।
‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী’র ব্যানারে সমাবেশের নেতৃত্বে শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের দেখা গেছে, যাদের বেশির ভাগ তরুণ-যুবক। এ ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য বিশ্ববাসীকে তাদের দাবি সম্পর্কে জানান দেয়া।
সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, ‘বাড়ি চলো’ প্রচার কর্মসূচির মূল আয়োজক আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)। এ সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ। তিনি ছিলেন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা এবং প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনবিরোধী মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বন্দুকধারীর গুলিতে খুন হন মুহিবুল্লাহ।
মুহিবুল্লাহ হত্যার পর এ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও আশ্রয় শিবির থেকে আত্মগোপন করেন। এখন ‘বাড়ি চলো’ প্রচার কর্মসূচি হচ্ছে ‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী’র ব্যানারে।
রোহিঙ্গা যুবক আরমান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফের সব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আমরা সমাবেশের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে চাই, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। আরাকান রাজ্য (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) আমাদের জন্মভূমি। আমরা জন্মভূমিতে ফিরতে চাই।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সোচ্চার এআরএসপিএইচ সংগঠনের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘‘বাড়ি চলো’ প্রচার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মুহিবুল্লাহ নিজেই (হত্যার ছয় মাস আগে)। এআরএসপির যে কার্যালয়ে আরসা সন্ত্রাসীরা গুলি করে তাকে হত্যা করেছিল, সে কার্যালয়ের ভেতরে এখনও বড় ব্যানারে লেখা আছে ‘বাড়ি চলো’ স্লোগান। তার ঘোষণা বাস্তবায়নে রোহিঙ্গারা এখন স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরতে চায়। সে কথার জানান দিচ্ছে আজকের গণজমায়েত।’’
আশ্রয় শিবিরগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক বলেন, উখিয়ার ২৫টি আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গাদের আটটি জায়গায় জমায়েতের সুযোগ দেয়া হয়েছে। একেকটি জমায়েতে সর্বোচ্চ ৩০০ জন রোহিঙ্গা থাকতে পারবেন। শান্তিশৃঙ্খলা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে এসেছে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখের বেশি।