বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান পলাতক কি না এবং তাদের পক্ষে আইনজীবী শুনানি করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আগামী ২৬ জুন আদেশ দেবে হাইকোর্ট।
রোববার এ সংক্রান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই তারিখ নির্ধারণ করেন।
আদালতে তারেক-জোবাইদার পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে থাকতে আইনের মধ্যে থেকেই জামিন নিয়েছেন। জামিনে থাকা অবস্থায় তিনি দেশের বাইরে গেছেন। তার বিরুদ্ধে বহু মামলা পেন্ডিং আছে। আমি বলব, রাজনৈতিকভাবে এত দিন পরে মামলাটি উত্থাপন করা হয়েছে।
‘আমরা বলেছি, তারেক রহমান আপিল বিভাগ পর্যন্ত জামিনে আছেন। জামিনে থাকলে কখনো পলাতক হয় না। এদেশে কোনো উদারহণও নেই যে এক মামলায় সাজা হলে এবং আরেক মামলা জামিনে থাকলে তিনি পলাতক। যে মামলায় জামিনে আছেন সে মামলায় তিনি পলাতক না। সুতরাং এ মামলায়ও তাকে পলাতক বলা যাবে না।’
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আপিল বিভাগ বলে দিয়েছে, জোবাইদা রহমান পলাতক। কাজেই ওনার পক্ষে শুনানির করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তারা বলছেন তারেক রহমান পলাতক না।’
তিনি বলেন, ‘২১শে গ্রেনেড হামলা মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা; এছাড়া একটি অর্থপাচার মামলাসহ তিনটি মামলায় তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। এ তিন মামলায় তিনি পলাতক আছেন। তাকে খুঁজছে পুলিশ। এ অবস্থায় হাইকোর্টে যখন তিনি মামলা করেছেন, তখন হয়তো তিনি পলাতক ছিলেন না। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি তিনটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এ অবস্থায় এই মামলায় তারপক্ষে শুনানি করার কোনো সুযোগ নেই।’
এক যুগের বেশি সময় পর গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে তারেক ও জোবাইদার ওই মামলায় রুলের শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে এ মামলা করে দুদক। এতে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। দুদক এই মামলা করার পর একই বছর তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আলাদা রিট আবেদন করেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এরপর আসামিরা এই মামলা বাতিলের আবেদন করলে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয়। দীর্ঘ বিরতির পর গত ১৯ এপ্রিল বিষয়টি কার্যতালিকায় এলে রুল শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। তবে শুনানি পেছানোর জন্য আবেদন করলে এক মাস পর দিন ঠিক করে দেয় হাইকোর্ট।এ মামলার বৈধতা নিয়ে আরেকটি ফৌজদারি আবেদন করেছিলেন জোবাইদা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তখন এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাইকোর্ট। সেই রুলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলে জারি করা রুল খারিজ হয়ে যায়।