সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার পানি সরাতে কয়েকটি সড়ক কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
সচিবালয়ে রোববার ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা এবং ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে তৃতীয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি যাতে সরে যেতে পারে, এ জন্য কয়েকটি রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। কিছু রাস্তা কাটার প্রয়োজন পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
‘এতে পানি সহজে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোথাও প্রয়োজন হলে আরও রাস্তা কেটে ফেলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোণাসহ যেসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা হয়েছে, সেগুলো বৃষ্টির পানির পাশাপাশি উঁচু অঞ্চলের পানির প্রভাব আছে। মাঝে মাঝে মাঝে আমরা কখনও কখনও দুর্যোগ মোকাবেলা করি। এবারও আমাদের কিছু কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে এবং প্লাবিত হওয়ার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
রাজধানীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঢাকায় যতগুলো খাল আছে, সেগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি।
‘অনেকগুলো হস্তান্তরও করেছি, যার সুফল আমরা ইতোমধ্যে ভোগ করছি। যদিও এসব খালের অনেক অংশ অনেকে দখল করে নিয়েছে, যা দখলমুক্ত করা অনেক কঠিন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সুফলের নমুনা আমরা দেখছি। আমি যখন শুরুতে মন্ত্রণালয়ে আসছিলাম, তখন জলাবদ্ধতার জন্য গাড়ি আসছিল না, আটকে গিয়েছিল। এখানে এত পরিমাণ পানি জমা হয়ে গিয়েছিল। আমাদের তেজগাঁও, শান্তিনগরসহ অনেক এলাকায় পানি জমে যেত। আমরা মনে করি খাল হস্তান্তরের ফলে কিছুটা সুফল আমরা উপভোগ করছি।’
ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘১০০ অথবা ১১০ বছরে হয়তো এমন দুর্যোগ আসে। এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন সময় এমন দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। দুর্যোগের জন্য সবসময় আমাদের প্রস্তুতি থাকে।
‘আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বন্যা মোকাবিলায় যুগ্ম সচিব জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। পরে প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।’
বন্যার বিষয়ে তাজুল বলেন, ‘বন্যা কী পর্যায়ে যাবে, সেটার পূর্বাভাস কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। যারা পূর্ভাবাস দেয়, তারা বলেছে একটা আগাম সতর্কতা আছে, তবে সেটা কোন পর্যায়ে যাবে, সেটি বলা হয়নি।
‘ঢাকায় পানি যদি অতি মাত্রায় উঁচু অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হয় এবং অনেক বেশি বর্ষণ হলে এখানেও প্লাবিত হয়ে যেতে পারে। প্রাকৃতিক বিষয়ে তো কেউই প্রস্তুত থাকে না, তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’
তিনি বলেন, ‘বন্যা হবে, কিন্তু কতটুকু হবে, সেটির পূর্বাভাস কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। ১৯৯৮ সালের বন্যাকে আমরা মোকাবিলা করেছি; আগেও বহুবার মোকাবিলা করেছি। ১৯৯৮ সালে বলা হয়েছিল ২ কোটি মানুষ মারা যাবে, কিন্তু একজনও মারা যায়নি। সে সময় মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি।
‘যেখানে যা করা দরকার, সেটি করা হচ্ছে, তবে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অপ্রস্তুত থাকা উচিত না। আমরা সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি।’
এ পর্যন্ত কয়টি খাল উদ্ধার করা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনে মোট ২৬টি খাল হস্তান্তর করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সাড়ে ৬ একর জমি দখলমুক্ত করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশন ২৫ একর দখলমুক্ত করেছে। এ কাজগুলো চলমান আছে। নিম্নাঞ্চলটা কিন্তু দ্রুত প্লাবিত হয়। আমরা এখনও সব কাজ করে ফেলতে পেরেছি, তা নয়। কিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে, উদ্ধারের কাজ আরও চলমান আছে।
‘সিটি করপোরেশনে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে নিম্নাঞ্চল বেশিরভাগ। সেখানে অবকাঠামোগত সমস্যাও আছে, যা নিরসনের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে। কাজটি শেষ হলে সেখানকার অনেক উন্নতি হবে।’