এক সঙ্গে সরকার পতন আন্দোলন করতে বৈঠক করেছে বিএনপি ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী সরকার পতন আন্দোলনে একমত হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান দুই দলের নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের যে ঘোষিত কর্মসূচি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করার, সে কর্মসূচি অনুযায়ী আজ ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি। আমাদের দেশের মানুষের ওপরে দুঃশাসন চেপে বসে আছে, বসে আছে একটি অনির্বাচিত সরকার মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য, আশা-আকাঙ্খা সেগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে, মানুষের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে।
‘শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, প্রশাসন-বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে, রাষ্ট্রকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার ব্যাপারে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সাথে আলাপ করে একমত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি যে আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী, যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন, যাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় প্রতিহিংসামূলকভাবে আজকে তিন বছর ধরে, প্রথমে কারা অন্তরীণ এখন গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। চরম অসুস্থতার মধ্যেও তাকে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, একই সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে যাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে আলেম ওলামাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের এবং যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, সাজা দেয়া হয়েছে তাদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করব।’
এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করার প্রতিবাদ ও তাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করবে।
এ সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী বলেন, ’২০ দলীয় জোটের বিএনপির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দেশের মানুষ আজকে সুখী না, পেটের ক্ষুদায় মানুষ রাস্তাঘাটে হাহাকার করছে। বন্যার মধ্যেও সরকারের সাহায্য পর্যাপ্ত পরিমাণে যাচ্ছে না। তা ছাড়া দেশের প্রধান যে জিনিসটা, গণতন্ত্রকে এই সরকার নষ্ট করে ফেলেছে। এই সরকারকে আর টিকে থাকতে দেয়া যায় না। অনতিবিলম্বে এই সরকারকে হঠাতে হবে। সেই হঠানোর জন্য আমাদের কোরবানির প্রয়োজন আছে, আন্দোলনের প্রয়োজন আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ জনগণের আন্দোলন বৃথা যাবে না। এই দেশে অতীতেও আন্দোলন হয়েছে। অনেক স্বৈরাচারী সরকার এসেছে, টিকতে পারেনি; এরাও পারবে না। আমরা সেই মনোবল নিয়ে মাঠে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত আজকে নিয়েছি। বিএনপির মহাসচিব সাহেব যে কথাগুলো বলেছেন সে কথাগুলোর সাথে আমরা একমত হয়েছি।’
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, নির্বাহী সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, সিনিয়র সহ-সভাপতি শায়খুল হাদীস শেখ মজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মাওলানা শহীদুল ইসলাম আনসারী, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জামাল নাসের চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল হক কাওসারী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা রশিদ বীন ওয়াক্কাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন খান উপস্থিত ছিলেন।