বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোমেশ্বরীর পানিতে ব্যাপক ক্ষতি কৃষির

  •    
  • ১৮ জুন, ২০২২ ২০:২২

নেত্রকোণা-মোহনগঞ্জ সড়কের বিরামপুর এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় মোহনগঞ্জের সঙ্গে জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নেত্রকোণা-কলমাকান্দা সড়কের বাহাদুরকান্দা এলাকাটি ডুবে যাওয়ায় ওই সড়কেও যানবাহন চলতে পারছে না।

নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে সোমেশ্বরী, কংস ও ধনু নদীর পানি। জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে আট উপজেলার ৪০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত সাড়ে ৪০০ গ্রাম। জলমগ্ন মানুষ সহায়-সম্পদ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন।

বন্যার পানিতে সাত উপজেলার প্রায় ৫৭০ হেক্টর জমির আউশ ধান এবং নানা ধরনের শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় এক হাজার পুকুরের মাছ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত শনিবার সন্ধ্যা ৬টার রিপোর্টের বরাতে জানান, কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার, কংসর পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার এবং খালিয়াজুরীতে ধনুর পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমদুা আক্তার জানান, জঙ্গলবাড়ি এলাকায় কংস নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ বাঁধটি ভেঙে গেলে জেলা শহরসহ সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন নতুন করে বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসন জিওব্যাগ ফেলে বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করছে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জন খান মজলিশ জানান, জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, খালিয়াজুরী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত ১৬ হাজার ১৮০ জন মানুষ সহায়-সম্পদ ও গবাদিপশু নিয়ে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গত উপজেলাগুলোতে বিতরণের জন্য ৬৮ টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি খাত। বিভিন্ন এলাকায় ধান, শাকসবজিসহ নানা ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক শাহজাহান সিরাজ জানান, বন্যার পানিতে সাত উপজেলার প্রায় ৫৭০ হেক্টর জমির আউশ ধান এবং নানা ধরনের শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কাদির জানিয়েছেন, প্রায় এক হাজার বাণিজ্যিক-অবাণিজ্যিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।বানের পানি ঢুকে পড়ায় অনেক স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অভিভাবকরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহ জানিয়েছেন, অন্তত ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে।

সরেজমিন কলমাকান্দা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, ওই উপজেলার অন্তত ২০০ গ্রাম বন্যাপ্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের কিছু এলাকায় নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। উপজেলা সদরের বেশির ভাগ বাসাবাড়ি, বেশ কিছু অফিস এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে। রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের রান্নাবান্না।মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরের গরুহাট্টা, নওহাল, কাজিয়াহাটি, কাচারি রোড এলাকার বহু বাসাবাড়ি এবং দোকনপাটে পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি হয়েছে এ উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম। খালিয়াজুরীর ৬৮টি গ্রামের সব কয়টিই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ওই উপজেলার সব রাস্তাঘাট। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না মানুষ। কিন্তু এলাকায় পর্যাপ্ত নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে ঘরে তোলা বোরো ধানসহ গবাদিপশু নিয়ে মারাত্মক বিপাকে পড়েছে বন্যাদুর্গত বহু পরিবার। বারহাট্টার আসমা, সিংধা, চিরাম এবং রায়পুর এলাকার অবস্থাও একই। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং মানুষ একসঙ্গে থাকতে গিয়ে বন্যাদুর্গতরা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্রের চারপাশেও পানি চলে এসেছে।

নেত্রকোণা-মোহনগঞ্জ সড়কের বিরামপুর এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় মোহনগঞ্জের সঙ্গে জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নেত্রকোণা-কলমাকান্দা সড়কের বাহাদুরকান্দা এলাকাটি ডুবে যাওয়ায় ওই সড়কেও যানবাহন চলতে পারছে না।

শনিবারও সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। তিন দিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ভারি বৃষ্টির কারণে ঘর থেকেই বেরোতে পারছেন না মানুষ। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর