মৌলভীবাজারের ইকবাল মাজেদ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। ভেবেছিলেন বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই ফিরতে পারবেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর পাননি।
নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে শুক্রবার রাতে সবশেষ কথা বলেন তিনি। ইকবাল জানান, সুনামগঞ্জের পুলিশ লাইনে তিনি দুদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। বাইকগুলো ডুবে আছে। তারা একটু বসার জায়গাও পাচ্ছে না। শুকনো খাবার ও পানির সংকট ভয়াবহ।যেভাবেই হোক একটু খাবারের ব্যবস্থা করতে প্রতিবেদকে অনুরোধ করেন তিনি।
একই অবস্থা ঢাকা থেকে ঘুরতে যাওয়া ১৬ জনের আরেকটি দলের। তারা দুদিন ধরে সুনামগঞ্জের দিরাই রাস্তার মুখে একটি জায়গায় অবস্থান করছেন। তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন সিলেটের বিমান ধর।
বিমান ধর বলেন, ‘তারা আমার বন্ধু। আমি শনিবার সকালে সিলেট থেকে নৌকা নিয়ে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করব বলে ভাবছিলাম। কিন্তু সারা রাত তাদের সঙ্গে ফোনে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। তারা স্থান পরিবর্তন করল না কি অন্যদিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে তা নিশ্চিত না হয়ে যেতে পারছি না।’ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। এতে জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নেই ইন্টারনেট। দুই-একটি এলাকা ছাড়া বাকি জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা।
পর্যটকদের উদ্ধারকাজের সমন্বয়কারীদের একজন জাহাজি দ্যা কিং অফ ট্যাঙ্গুয়ারের বিজয় কুমার ঘোষ। তিনি জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে ঠিক কতজন পর্যটক সেখানে আটকা পড়েছেন সে বিষয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছেন না।
বিজয় কুমার ঘোষ বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি দেখে আমাদের বোটগুলোর যাত্রা বাতিল করে দিয়েছি ১৫ তারিখ। তারপরও কিছু অতি উৎসাহী পর্যটক সুনামগঞ্জ আসেন। পরে তারা বিভিন্ন স্পটে আটকা পড়েন। আমাদের রেসকিউ টিম তাদের অনেককে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে। বালু বোঝাই বল্কহেড দিয়ে আমাদের ই ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে মোহনগঞ্জ হয়ে ঢাকা পাঠাই।’
অন্তত ৩০০ পর্যটক এখন আটকা আছে জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘আটকা পড়াদের একটি বড় অংশ পানসি রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছেন। আমরা শনিবার সকালেও ৯ জনকে অন্য দুটি হোটেল থেকে উদ্ধার করেছি।’
আটকে পড়াদের উদ্ধারে ট্যুরিস্ট বোট অ্যাসোসিয়েশন অফ সুনামগঞ্জের প্রায় ৭০ টি বোট ও শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।