টাঙ্গাইলে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর মাঝখানে দেবে গেছে। কেন এ ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না পৌরসভার প্রকৌশলী। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কর্মীরাও কিছু বলতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইল-বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কের বেড়ডোমা এলাকার লৌহজং নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি দেবে যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ করার দাবি এলাকাবাসীর। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার প্রকৌশলী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের আওতায় টাঙ্গাইল পৌরসভা সেতুটির বাস্তবায়ন করছে। ৮ মিটার প্রস্থ ও ৩০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
২০২০ সালের ১২ নভেম্বর নির্মাণকাজ শুরু করে ‘ব্রিক্সস অ্যান্ড ব্রিজ লিমিটেড’ এবং ‘দ্য নির্মিত’ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজটি বাস্তবায়ন শুরু করে। গত ১১ মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
গত সপ্তাহে সেতুটির ওপরের অংশে ঢালাই করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেতুটির সেন্টারিং সাটারিং সরে গিয়ে মাঝখানে সাড়ে ৩ ফুট দেবে যায়।
লৌহজং নদীর মাঝখান থেকে গাছ ও বাঁশের পাইল সরে যাওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে দেবে যাওয়া স্থাপনাটি দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।
দেবে যাওয়া স্থান পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখানে যে বেইলি সেতু ছিল, সেটিও দুবার ভেঙে যাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কয়েক বছর। এ সেতু নির্মাণের কারণেও দুর্ভোগ অব্যাহত আছে। সেতু না থাকার কারণে এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চায় না। জমির দামও অনেক কমে গেছে।’
খোরশেদ হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘সেতুটি দেবে যাওয়ায় আমাদের আরও কয়েক বছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’
পথচারী আজাদ মিয়া বলেন, ‘পার্কবাজার থেকে বাজার করে নিজেই আনতে হয়। কোনো রিকশা আসে না। দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা কাশেম মিয়া বলেন, ‘এই সেতু না থাকায় পার্শ্ববর্তী অস্থায়ী সেতুতে মাঝেমধ্যেই যানজটের সৃষ্টি হয়। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে।’
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শোনে না। সেতুটি দেবে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষের কয়েক বছরের জন্য দুর্ভোগ বেড়ে গেল।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার। তবে জামিল ভাইসহ কয়েকজন মিলে বাস্তবায়ন করছে। আমার নেতৃত্বে কোনো কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
পৌরসভার প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।’